০৬৭. সূরা আল মুলক
আয়াতঃ ৩০; রুকুঃ ০২; মাক্কী
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম
করুণাময়
মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿تَبَـٰرَكَ ٱلَّذِى بِيَدِهِ
ٱلْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ﴾
১। অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের
কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর
ক্ষমতা রাখেন।
﴿ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ
وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ﴾
২। কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে
দেখার জন্য তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।
﴿ٱلَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمَـٰوَٰتٍۢ
طِبَاقًۭا ۖ مَّا تَرَىٰ فِى خَلْقِ ٱلرَّحْمَـٰنِ مِن تَفَـٰوُتٍۢ ۖ فَٱرْجِعِ ٱلْبَصَرَ
هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍۢ﴾
৩। তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরী করেছেন। তুমি রাহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার
অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি?
﴿ثُمَّ ٱرْجِعِ ٱلْبَصَرَ
كَرَّتَيْنِ يَنقَلِبْ إِلَيْكَ ٱلْبَصَرُ خَاسِئًۭا وَهُوَ حَسِيرٌۭ﴾
৪। তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও
ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে।
﴿وَلَقَدْ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ
ٱلدُّنْيَا بِمَصَـٰبِيحَ وَجَعَلْنَـٰهَا رُجُومًۭا لِّلشَّيَـٰطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا
لَهُمْ عَذَابَ ٱلسَّعِيرِ﴾
৫। আমি তোমাদের কাছের আসমানকে সুবিশাল প্রদীপমালায় সজ্জিত করেছি। আর সেগুলোকে শয়তানদের মেরে তাড়ানোর
উপকরণ বানিয়ে দিয়েছি। এসব শয়তানের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
﴿وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِرَبِّهِمْ
عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ﴾
৬। যেসব লোক তাদের রবকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটি অত্যন্ত খারাপ জায়গা।
﴿إِذَآ أُلْقُوا۟ فِيهَا
سَمِعُوا۟ لَهَا شَهِيقًۭا وَهِىَ تَفُورُ﴾
৭। তাদেরকে যখন সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তার ভয়ানক
গর্জনের শব্দ শুনতে পাবে
﴿تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ ٱلْغَيْظِ
ۖ كُلَّمَآ أُلْقِىَ فِيهَا فَوْجٌۭ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَآ أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌۭ﴾
৮। এবং তা টগবগ করে ফুটতে থাকবে। অত্যধিক রোষে তা ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই তার মধ্যে কোন দলকে নিক্ষেপ করা
হবে তখনই তার ব্যবস্থাপকরা জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোন সাবধানকারী
আসেনি?
﴿قَالُوا۟ بَلَىٰ قَدْ جَآءَنَا
نَذِيرٌۭ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا
فِى ضَلَـٰلٍۢ كَبِيرٍۢ﴾
৯। তারা জবাব দেবে, হ্যাঁ, আমাদের
কাছে সাবধানকারী এসেছিলো। কিন্তু আমরা তাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিলাম এবং
বলেছিলাম আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরাই বরং বিরাট ভুলের মধ্যে পড়ে আছো।
﴿وَقَالُوا۟ لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ
أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِىٓ أَصْحَـٰبِ ٱلسَّعِيرِ﴾
১০। তারা আরো বলবেঃ আহা! আমরা যদি শুনতাম এবং
বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বুঝতাম, তাহলে আজ এ জ্বলন্ত
আগুনে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে গণ্য হতাম না।
﴿فَٱعْتَرَفُوا۟ بِذَنۢبِهِمْ
فَسُحْقًۭا لِّأَصْحَـٰبِ ٱلسَّعِيرِ﴾
১১। এভাবে তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করবে। এ দোযখবাসীদের ওপর আল্লাহর লানত।
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَخْشَوْنَ
رَبَّهُم بِٱلْغَيْبِ لَهُم مَّغْفِرَةٌۭ وَأَجْرٌۭ كَبِيرٌۭ﴾
১২। যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে, নিশ্চয়ই তারা লাভ করবে ক্ষমা এবং বিরাট
পুরস্কার।
﴿وَأَسِرُّوا۟ قَوْلَكُمْ
أَوِ ٱجْهَرُوا۟ بِهِۦٓ ۖ إِنَّهُۥ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ﴾
১৩। তোমরা নীচু স্বরে চুপে চুপে কথা বলো কিংবা
উচ্চস্বরে কথা বলো (আল্লাহর কাছে দু’টোই সমান) তিনি তো মনের অবস্থা
পর্যন্ত জানেন।
﴿أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ
وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلْخَبِيرُ﴾
১৪। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই কি জানবেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সব বিষয় ভালভাবে অবগত।
﴿هُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ
ٱلْأَرْضَ ذَلُولًۭا فَٱمْشُوا۟ فِى مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا۟ مِن رِّزْقِهِۦ ۖ وَإِلَيْهِ
ٱلنُّشُورُ﴾
১৫। তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের
জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তোমরা এর বুকের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক
খাও। আবার জীবিত হয়ে
তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
﴿ءَأَمِنتُم مَّن فِى ٱلسَّمَآءِ
أَن يَخْسِفَ بِكُمُ ٱلْأَرْضَ فَإِذَا هِىَ تَمُورُ﴾
১৬। যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেবেন
এবং অকস্মাৎ ভুপৃষ্ঠ জোরে ঝাঁকুনি খেতে থাকবে, এ ব্যাপারে কি তোমরা নির্ভয় হয়ে
গিয়েছো?
﴿أَمْ أَمِنتُم مَّن فِى ٱلسَّمَآءِ
أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًۭا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ﴾
১৭। যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী
হাওয়া পাঠাবেন —এ ব্যাপরেও কি তোমরা
নির্ভয় হয়ে গিয়েছো? তখন তোমরা জানতে পারবে আমার সাবধানবাণী
কেমন?
﴿وَلَقَدْ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ
مِن قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ﴾
১৮। তাদের পূর্বের লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল। ফলে দেখো, আমার পাকড়াও কত কঠিন
হয়েছিল।
﴿أَوَلَمْ يَرَوْا۟ إِلَى
ٱلطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَـٰٓفَّـٰتٍۢ وَيَقْبِضْنَ ۚ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا ٱلرَّحْمَـٰنُ
ۚ إِنَّهُۥ بِكُلِّ شَىْءٍۭ بَصِيرٌ﴾
১৯। তারা কি মাথার ওপর উড়ন্ত পাখীগুলোকে ডানা মেলতে ও
গুটিয়ে নিতে দেখে না? রাহমান ছাড়া আর কেউ নেই যিনি তাদেরকে ধরে রাখেন। তিনিই সবকিছুর রক্ষক।
﴿أَمَّنْ هَـٰذَا ٱلَّذِى
هُوَ جُندٌۭ لَّكُمْ يَنصُرُكُم مِّن دُونِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ۚ إِنِ ٱلْكَـٰفِرُونَ إِلَّا
فِى غُرُورٍ﴾
২০। বলো তো, তোমাদের কাছে কি এমন কোন বাহিনী
আছে যা রাহমানের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? বাস্তব অবস্থা হলো, এসব কাফেররা ধোঁকায় পড়ে
আছে মাত্র।
﴿أَمَّنْ هَـٰذَا ٱلَّذِى
يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُۥ ۚ بَل لَّجُّوا۟ فِى عُتُوٍّۢ وَنُفُورٍ﴾
২১। অথবা বলো, রাহমান যদি তোমাদের রিযিক বন্ধ করে
দেন তাহলে এমন কেউ আছে, যে তোমাদের রিযিক দিতে পারে?
প্রকৃতপক্ষে এসব লোক বিদ্রোহ ও সত্য বিমুখতায় বদ্ধপরিকর।
﴿أَفَمَن يَمْشِى مُكِبًّا
عَلَىٰ وَجْهِهِۦٓ أَهْدَىٰٓ أَمَّن يَمْشِى سَوِيًّا عَلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ﴾
২২। ভেবে দেখো, যে ব্যক্তি মুখ নিচু করে পথ চলছে সে-ই সঠিক পথপ্রাপ্ত, না যে ব্যক্তি মাথা উঁচু
করে সোজা হয়ে সমতল পথে হাঁটছে সে-ই সঠিক পথপ্রাপ্ত?
﴿قُلْ هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنشَأَكُمْ
وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَـٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَ ۖ قَلِيلًۭا مَّا تَشْكُرُونَ﴾
২৩। এদেরকে বলো, আল্লাহই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন,
তিনিই তোমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও
﴿قُلْ هُوَ ٱلَّذِى ذَرَأَكُمْ
فِى ٱلْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ﴾
২৪। এদেরকে বলো, আল্লাহই সেই সত্তা যিনি তোমাদের
পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে।
﴿وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا
ٱلْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ﴾
২৫। এরা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে বলো এ
ওয়াদা কবে বাস্তবায়িত হবে?
﴿قُلْ إِنَّمَا ٱلْعِلْمُ
عِندَ ٱللَّهِ وَإِنَّمَآ أَنَا۠ نَذِيرٌۭ مُّبِينٌۭ﴾
২৬। বলো, এ বিষয়ে জ্ঞান আছে শুধু আল্লাহর নিকট। আমি স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।
﴿فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةًۭ
سِيٓـَٔتْ وُجُوهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَقِيلَ هَـٰذَا ٱلَّذِى كُنتُم بِهِۦ تَدَّعُونَ﴾
২৭। তারপর এরা যখন ঐ জিনিসকে কাছেই দেখতে পাবে তখন যারা
অস্বীকার করেছে তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যাবে। আর তাদেরকে বলা হবে, এতো সেই জিনিস যা তোমরা চাচ্ছিলে।
﴿قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِىَ
ٱللَّهُ وَمَن مَّعِىَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَن يُجِيرُ ٱلْكَـٰفِرِينَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍۢ﴾
২৮। তুমি এদেরকে বলো, তোমরা কখনো এ বিষয়টি ভেবে দেখেছো
কি যে, আল্লাহ যদি আমাকে ও আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করে দেন
কিংবা আমাদের ওপর রহম করেন তাতে কাফেরদেরকে কঠিন শাস্তি থেকে কে রক্ষা করবে?
﴿قُلْ هُوَ ٱلرَّحْمَـٰنُ
ءَامَنَّا بِهِۦ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ فِى ضَلَـٰلٍۢ
مُّبِينٍۢ﴾
২৯। এদেরকে বলো, তিনি অত্যন্ত দয়ালু, আমরা তাঁর ওপর ঈমান এনেছি এবং তাঁরই ওপর নির্ভর করেছি। তোমরা অচিরেই জানতে পারবে কে স্পষ্ট
বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে?
﴿قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ
مَآؤُكُمْ غَوْرًۭا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَآءٍۢ مَّعِينٍۭ﴾
৩০। এদেরকে বলো, তোমরা কি এ বিষয়ে কখনো
চিন্তা-ভাবনা করে দেখছো যে, যদি তোমাদের কুয়াগুলোর পানি
মাটির গভীরে নেমে যায় তাহলে পানির এ বহমান স্রোত কে তোমাদের ফিরিয়ে এনে দেবে?
— সমাপ্ত —