আল হাককাহ

নামকরণঃ

সূরার প্রথম শব্দটিকেই এর নাম হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ

এ সূরাটিও মক্কী জীবনের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরা সমূহের একটি। এর বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায়, সূরাটি যে সময় নাযিল হয়েছিলো তখন রাসূলুল্লাহ সা. এর বিরোধিতা শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তখনো তা তেমন তীব্র হয়ে ওঠেনি। মুসনাদে আহমাদ হাদীস গ্রন্থে হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একদিন রাসূলুল্লাহ সা.কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি বাড়ি থেকে বের হলাম। কিন্তু আমার আগেই তিনি মসজিদে হারামে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমি সেখানে পৌঁছে দেখলাম তিনি নামাযে সূরা আল হাক্কাহ পড়ছেন। আমি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম, শুনতে থাকলাম। কুরআনের বাচনভঙ্গি আমাকে বিস্ময়ে অভিভূত করে ফেলেছিলো। সহসা আমার মন বলে উঠলো, লোকটি নিশ্চয়ই কবি হবে। কুরাইশরাও তো তাই বলে। সে মুহূর্তেই নবী সা. এর মুখে একথাগুলো উচ্চারিত হলোঃ “এ একজন সম্মানিত রাসূলের বাণী। কোন কবির কাব্য নয়।” আমি মনে মনে বললামঃ কবি না হলে গণক হবেন। তখনই পবিত্র মুখে উচ্চারিত হলোঃ “এ গণকের কথা ও নয়। তোমরা খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করে থাকো। একথা তো বিশ্ব-জাহানের রব বা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।” এসব কথা শোনার পর ইসলাম আমার মনের গভীরে প্রভাব বিস্তার করে বসলো। হযরত উমরের রা. এ বর্ণনা থেকে জানা যায়, সূরাটি তাঁর ইসলাম গ্রহণের অনেক আগে নাযিল হয়েছিলো। কারণ এ ঘটনার পর বেশ কিছুকাল পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তবে বিভিন্ন সময়ের কিছু ঘটনা তাঁকে ক্রমান্বয়ে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলছিলো। অবশেষে তাঁর মনের ওপর চূড়ান্ত আঘাত পড়ে তাঁর আপন বোনের বাড়ীতে। আর এ ঘটনাই তাকে ঈমানের মনযিলে পৌঁছিয়ে দেয়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা মারইয়ামের ভূমিকা; সূরা আল ওয়াকিআ’র ভূমিকা)

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

সূরাটির প্রথম রুকূতে আখেরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকুতে কুরআনের আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া এবং হযরত মুহাম্মাদ সা. যে আল্লাহর রাসূল তার সত্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিয়ামত ও আখেরাতের কথা দিয়ে প্রথম রুকূ শুরু হয়েছে। কিয়ামত ও আখেরাত এমন একটি সত্য যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আয়াত ৪ থেকে ১২ তে বলা হয়েছে যে, যেসব জাতি আখেরাত অস্বীকার করেছে শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। অতঃপর ১৭ আয়াত পর্যন্ত কিয়ামত কিভাবে সংঘটিত হবে তার চিত্র পেশ করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ দুনিয়ার বর্তমান জীবন শেষ হওয়ার পর মানুষের জন্য আরেকটি জীবনের ব্যবস্থা করেছেন ১৮ থেকে ২৭ আয়াতে সে মূল উদ্দেশ্যটি বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেদিন সব মানুষ তার রবের আদালতে হাজির হবে। সেখানে তাদের কোন বিষয়ই গোপন থাকবে না। প্রত্যেকের আমলনামা তার নিজের হাতে দিয়ে দেয়া হবে। পৃথিবীতে যারা এ উপলব্ধি ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবন যাপন করেছিলো যে, একদিন তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজ নিজ কাজের হিসেব দিতে হবে, যারা দুনিয়ার জীবনে নেকী ও কল্যাণের কাজ করে আখেরাতের কল্যাণ লাভের জন্য অগ্রীম ব্যবস্থা করে রেখেছিলো তার সেদিন নিজের হিসেব পরিষ্কার ও নির্ঝঞ্ঝাট দেখে আনন্দিত হবে। পক্ষান্তরে যেসব লোক আল্লাহ তাআ’লার হকেরও পরোয়া করেনি, বান্দার হকও আদায় করেনি, তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করার মত কেউ থাকবে না। তারা জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে থাকবে।

দ্বিতীয় রুকূতে মক্কার কাফেরদেরকে বলা হয়েছে। এ কুরআনকে তোমরা কবির কাব্য ও গণকের গণনা বলে আখ্যায়িত করছো। অথচ তা আল্লাহর নাযিলকৃত বাণী। তা উচ্চারিত হচ্ছে একজন সম্মানিত মুখ থেকে। এ বাণীর মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে একটি শব্দও হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ইখতিয়ার রাসূলের নেই। তিনি যদি এর মধ্যে তাঁর মনগড়া কোন কথা শামিল করে দেন তাহলে আমি তার ঘাড়ের শিরা (অথবা হৃদপিণ্ডের শিরা) কেটে দেবো। এ একটি নিশ্চিত সত্য বাণী। যারাই এ বাণীকে মিথ্যা বলবে শেষ পর্যন্ত তাদের অনুশোচনা করতে হবে।

তরজমা ও তাফসীর

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿ٱلْحَآقَّةُ﴾

অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি

১. মূল আয়াত الْحَاقَّةُ  (আল হাক্কাতু) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এর অর্থ এমন ঘটনা যা অবশ্যই সংঘটিত হবে যার সংঘটিত হওয়া একান্ত বাস্তব, যার সংঘটিত হওয়ার কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কিয়ামতের জন্য এ ধরনের শব্দ ব্যবহার এবং তা দিয়ে বক্তব্য শুরু করা প্রমাণ করে যে, এ বক্তব্য এমন লোকদের উদ্দেশ্য করে পেশ করা হয়েছে যারা কিয়ামতের আগমনকে অস্বীকার করেছিলো তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, যে বিষয়কে তোমরা অস্বীকার করছো তা অবশ্যম্ভাবী তোমরা অস্বীকার করলেই তার আগমন ঠেকে থাকবে না

﴿مَا ٱلْحَآقَّةُ﴾

কি সে অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি?

﴿وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا ٱلْحَآقَّةُ﴾

তুমি কি জান সে অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি কি?

২. শ্রোতাদেরকে সজাগ ও সতর্ক করে দেয়ার জন্য পরপর দু’টি প্রশ্ন করা হয়েছে যাতে করে তারা বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পরবর্তী বক্তব্য শ্রবণ করে

﴿كَذَّبَتْ ثَمُودُ وَعَادٌۢ بِٱلْقَارِعَةِ﴾

সামূদ ও আদ আকস্মিকভাবে সংঘটিতব্য সে মহা ঘটনাকে অস্বীকার করেছিলো

৩. মক্কার কাফেররা যেহেতু কিয়ামতকে অস্বীকার করেছিলো এবং তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে একটি তামাশা বলে মনে করেছিলো, তাই প্রথমে তাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কিয়ামতের একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা তোমরা বিশ্বাস করো আর নাই করো তা অবশ্যই সংঘটিত হবে একথা বলার পর তাদের বলা হচ্ছে, এ বিষয়টি এতটা সাদামাটা বিষয় নয় যে, কেউ একটি সম্ভাব্য ঘটনার খবরকে মেনে নিচ্ছে কিংবা মেনে নিচ্ছে না বরং জাতিসমূহের নৈতিক চরিত্র এবং তাদের ভবিষ্যতের সাথে এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান তোমাদের পূর্বের জাতিগুলোর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতিই আখেরাতকে অস্বীকার করেছে এবং এ দুনিয়ার জীবনকে প্রকৃত জীবন বলে মনে করেছে পরিশেষে আল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে নিজের কৃতকর্মের হিসেব দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে মনে করেছে সেসব জাতিই মারাত্মক নৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়েছে অবশেষে আল্লাহর আযাব এসে তাদের অস্তিত্ব থেকে দুনিয়াকে পবিত্র করে দিয়েছে

৪. মূল শব্দ হলো الْقَارِعَةِ قرع  কারয়া শব্দটি আরবী ভাষায় খটখট শব্দ করা, হাতুড়ি পিটিয়ে শব্দ করা, কড়া নেড়ে শব্দ করা এবং একটি জিনিসকে আরেকটি জিনিস দিয়ে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে

﴿فَأَمَّا ثَمُودُ فَأُهْلِكُوا۟ بِٱلطَّاغِيَةِ﴾

তাই সামূদকে একটি কঠিন মহা বিপদ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে

৫. সূরা আল আ’রাফের ৭৮ আয়াতে একে اَلرُّجْفَةَ  (প্রচণ্ড ভূমিকম্প) বলা হয়েছে সূরা হূদের ৬৭ আয়াতে এ জন্য الصَّيْحَةَ  (প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ) শব্দ ব্যবহৃত হয়ে হয়েছে সূরা হা-মীম আস সাজদার ১৭ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে صَاعِقَةُ الْعَذَابِ  (আযাবের বজ্র ধ্বনি) এসে পাকড়াও করলো এখানে সে একই আযাবকে اَلطَّاغِيَةُ  (অতিশয় কঠিন দুর্ঘটনা) বলে উল্লেখ করা হয়েছে এটি একই ঘটনার বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনা মাত্র

﴿وَأَمَّا عَادٌۭ فَأُهْلِكُوا۟ بِرِيحٍۢ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍۢ﴾

আর আদকে কঠিন ঝঞ্ঝাবাত্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে

﴿سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍۢ وَثَمَـٰنِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًۭا فَتَرَى ٱلْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَىٰ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍۢ﴾

যা তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে আছে যেন খেজুরের পুরানো কাণ্ড

﴿فَهَلْ تَرَىٰ لَهُم مِّنۢ بَاقِيَةٍۢ﴾

তুমি তাদের কাউকে অবশিষ্ট দেখতে পাচ্ছো কি?

﴿وَجَآءَ فِرْعَوْنُ وَمَن قَبْلَهُۥ وَٱلْمُؤْتَفِكَـٰتُ بِٱلْخَاطِئَةِ﴾

ফেরাউন, তার পূর্ববর্তী লোকেরা এবং উলটপালট হয়ে যাওয়া জনপদসমূহও একই মহা অপরাধে অপরাধী হয়েছিলো

৬. অর্থাৎ লূতের কওমের জনবসতিসমূহ এসব জনবসতি সম্পর্কে সূরা হূদ (আয়াতঃ ৮২) এবং সূরা আল হিজরে (আয়াতঃ ৭৪) বলা হয়েছে, আমি ঐগুলোকে ওলটপালট করে দিলাম

﴿فَعَصَوْا۟ رَسُولَ رَبِّهِمْ فَأَخَذَهُمْ أَخْذَةًۭ رَّابِيَةً﴾

১০ তারা সবাই তাদের রবের প্রেরিত রাসূলের কথা অমান্য করেছিল তাই তিনি তাদের অত্যন্ত কঠোরভাবে পাকড়াও করেছিলেন

﴿إِنَّا لَمَّا طَغَا ٱلْمَآءُ حَمَلْنَـٰكُمْ فِى ٱلْجَارِيَةِ﴾

১১ যে সময় পানির তুফান সীমা অতিক্রম করলো তখন আমি তোমাদেরকে জাহাজে সওয়ার করিয়েছিলাম 

৭. নূহের সময়ের মহা প্লাবনের কথা বলা হয়েছে এ মহা প্লাবনে গোটা একটি জাতিকে এ একই মহা অপরাধের কারণে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল শুধু তারাই বেঁচে ছিল যারা আল্লাহর রাসূলের কথা মেনে নিয়েছিলো

৮. যেসব লোককে জাহাজে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো তারা হাজার হাজার বছর পর্বে অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে পরবর্তীকালের গোটা মানব গোষ্ঠী যেহেতু এ মহা প্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়া লোকদের সন্তান-সন্তুতি, তাই বলা হয়েছেঃ আমি তোমাদেরকে জাহাজে উঠিয়ে নিয়েছিলাম অর্থাৎ আজ তোমরা পৃথিবীতে এ কারণে বিচরণ করতে পারছো যে, মহান আল্লাহ‌ ঐ মহা প্লাবন দ্বারা শুধু কাফেরদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং ঈমানদারদের তা থেকে রক্ষা করেছিলেন

﴿لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةًۭ وَتَعِيَهَآ أُذُنٌۭ وَٰعِيَةٌۭ﴾

১২ যাতে এ ঘটনাকে আমি তোমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় স্মৃতি বানিয়ে দেই যেন স্মরণকারী কান তা সংরক্ষণ করে 

৯. অর্থাৎ এমন কান নয় যা শুনেও শোনে না এবং যে কানের পর্দা স্পর্শ করেই শব্দ অন্যত্র সরে যায় বরং এমন কান যা শোনে এবং কথাকে মনের গভীরে প্রবিষ্ট করিয়ে দেয় বাহ্যত এখানে কান শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু অর্থ হলো শ্রবণকারী মানুষ যারা এ ঘটনা শুনে তা মনে রাখে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অতঃপর আখেরাতকে অস্বীকার এবং আল্লাহ‌ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণাম কত ভয়াবহ তা কখনো ভুলে যায় না

﴿فَإِذَا نُفِخَ فِى ٱلصُّورِ نَفْخَةٌۭ وَٰحِدَةٌۭ﴾

১৩ অতঃপর১০ যে সময় শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে- 

১০. পরবর্তী আয়াত পড়ার সময় এ বিষয়টি দৃষ্টিতে থাকা দরকার যে, কিয়ামতের তিনটি পর্যায় আছে এ তিনটি পর্যায়ের ঘটনাবলী একের পর এক বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হবে কুরআন মজীদের কোন কোন জায়গায় এ তিনটি পর্যায় আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আবার কোন কোন জায়গায় প্রথম পর্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত একসাথে বর্ণনা করা হয়েছে উদাহরণ হিসেবে সূরা আন নামলের ৮৭নং আয়াতের উল্লেখ করা যায় এ আয়াতটিতে প্রথমবার শিংগায় ফুৎকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যখন সারা পৃথিবীর মানুষ একটি ভয়ানক বিকট শব্দে এক সাথে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে সেই সময় গোটা বিশ্ব-জাহানের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার যে অবস্থা সূরা আল হাজ্জের ১ ও ২ আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪৯ ও ৫০ আয়াতে এবং সূরা তাকবীরের ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকবে সূরা আয যুমারের ৬৭ থেকে ৭০ আয়াতে শিংগায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফুৎকারে কথা বলা হয়েছে এখানে বলা হয়েছে একবারের ফুৎকার সব মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হবে কিন্তু পরপর আবার শিংগায় ফুৎকার দিলে সব মানুষ জীবিত হয়ে যাবে এবং আল্লাহর আদালতে বিচারের সম্মুখীন হবে সূরা ত্বা-হাঃ ১০২ থেকে ১১২ আয়াত, সূরা আল আম্বিয়ার ১০১ থেকে ১০৩ আয়াত, সূরা ইয়াসীনের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াত এবং সূরা ক্বাফের ২০ থেকে ২২ আয়াতে শুধু শিংগায় তৃতীয়বারের ফুৎকারের কথা উল্লেখিত হয়েছে (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হাঃ টীকা ৭৮; সূরা আল হাজ্জঃ টীকা ১ এবং সূরা ইয়াসীনঃ টীকা ৪৬ ও ৪৭) কিন্তু কুরআন মজীদের এ জায়গায় এবং অন্য আরো অনেক জায়গায় শিংগায় প্রথম ফুৎকার থেকে শুরু করে মানুষের জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্ত কিয়ামতের সমস্ত ঘটনাবলী একই সাথে বর্ণনা করা হয়েছে

﴿وَحُمِلَتِ ٱلْأَرْضُ وَٱلْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةًۭ وَٰحِدَةًۭ﴾

১৪ একটি মাত্র ফুৎকার আর পাহাড়সহ পৃথিবীকে উঠিয়ে একটি আঘাতেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে 

﴿فَيَوْمَئِذٍۢ وَقَعَتِ ٱلْوَاقِعَةُ﴾

১৫ সেদিন সে মহা ঘটনা সংঘটিত হয়ে যাবে

﴿وَٱنشَقَّتِ ٱلسَّمَآءُ فَهِىَ يَوْمَئِذٍۢ وَاهِيَةٌۭ﴾

১৬ সেদিন আসমান চৌচির হয়ে যাবে এবং তার বন্ধন শিথিল হয়ে পড়বে 

﴿وَٱلْمَلَكُ عَلَىٰٓ أَرْجَآئِهَا ۚ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍۢ ثَمَـٰنِيَةٌۭ﴾

১৭ ফেরেশতারা এর প্রান্ত সীমায় অবস্থান করবে সেদিন আটজন ফেরেশতা তাদের ওপরে তোমার রবের আরশ বহন করবে১১ 

১১. এ আয়াতটি মুতাশাবেহাত আয়াত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এর নির্দিষ্ট কোন অর্থ বলা কঠিন আরশ কি বস্তু আমরা জানি না কিয়ামতের দিন আটজন ফেরেশতার আরশ বহন করার ধরন কি হবে তাও আমরা বুঝি না তবে কোন অবস্থায়ই এ ধারণা করা যাবে না যে, আল্লাহ‌ তাআ’লা আরশের ওপর উপবিষ্ট থাকবেন আর আটজন ফেরেশতা তাকে সহ আরশ বহন করবে সেই সময় আল্লাহ‌ আরশের ওপর উপবিষ্ট থাকবেন, এমন আয়াতও বলা হয়নি মহান আল্লাহ‌ দেহসত্তাহীন এবং দিক ও স্থানের গণ্ডি থেকে মুক্ত এমন এক সত্তা কোন স্থানে অধিষ্ঠিত থাকবেন আর কোন মাখলুক তাকে বহন করবে এটা ভাবা যায় না আল্লাহর মহান সত্তা সম্পর্কে কুরআন মজীদের দেয়া ধারণা আমাদেরকে এরূপ কল্পনা করতে বাধা দেয় এ জন্য খুঁজে খুঁজে এর অর্থ বের করার প্রচেষ্টা চালানো নিজেকে গোমরাহী ও বিভ্রান্তির গহবরে নিক্ষেপ করার শামিল তবে এ বিষয়টি বুঝা দরকার যে, আল্লাহ‌ তাআলার শাসন ও শাসন কর্তৃত্ব এবং তাঁর যাবতীয় বিষয়ের একটা ধারণা দেয়ার জন্য কুরআন মজীদে আমাদের জন্য এমন একটি চিত্র পেশ করা হয়েছে যা দুনিয়ার কোন বাদশার বাদশাহীর চিত্রের অনুরূপ মানুষের ভাষায় রাষ্ট্র ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির জন্য যে পরিভাষা ব্যবহার করা হয় এ জন্য অনুরূপ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে কারণ, মানুষের বুদ্ধি-বিবেক এরূপ চিত্র এবং পরিভাষার সাহায্যই গোটা বিশ্ব-সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় কিছুটা উপলব্ধি করতে সক্ষম বিশ্ব-জাহানের ইলাহী ব্যবস্থাপনাকে মানুষের বোধগম্যতার সীমায় নিয়ে আসাই এ ধরনের বর্ণনাভঙ্গি গ্রহণের উদ্দেশ্য তাই এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা ঠিক নয়

﴿يَوْمَئِذٍۢ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَىٰ مِنكُمْ خَافِيَةٌۭ﴾

১৮ সেদিনটিতে তোমাদেরকে পেশ করা হবে তোমাদের কোন গোপনীয় বিষয়ই আর সেদিন গোপন থাকবে না 

﴿فَأَمَّا مَنْ أُوتِىَ كِتَـٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقْرَءُوا۟ كِتَـٰبِيَهْ﴾

১৯ সে সময় যাকে তার আমলনামা ডান হতে দেয়া হবে,১২ সে বলবেঃ নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখো১৩ 

১২. ডান হাতে আমলনামা দেয়ার অর্থই হবে তার হিসেব-নিকেশ অত্যন্ত পরিষ্কার আর সে আল্লাহ‌ তাআলার আদালতে অপরাধী হিসেবে নয়, বরং একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে উপস্থিত হতে যাচ্ছে অধিকতর সম্ভাবনা হলো, আমলনামা দেয়ার সময়ই সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষগুলো নিজেরাই ডান হাত বাড়িয়ে আমলনামা গ্রহণ করবে কারণ মৃত্যুর সময় থেকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তার সাথে যে আচরণ করা হবে তাতে তার মনে এতটা আস্থা ও প্রশান্তি থাকবে যে, সে মনে করবে আমাকে এখানে পুরস্কার প্রদানের জন্য হাজির করা হচ্ছে, শাস্তিদানের জন্য নয় একজন মানুষ সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরপারে যাত্রা করছে, না অসৎ ও পাপী হিসেবে যাত্রা করছে মৃত্যুর সময় থেকেই তা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় একথাটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে তাছাড়া মৃত্যুর সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত একজন নেককার মানুষের সাথে সম্মানিত মেহমানের মত আচরণ করা হয় কিন্তু একজন অসৎ ও বদকার মানুষের সাথে আচরণ করা হয় অপরাধে অভিযুক্ত কয়েদীর মত এরপর কিয়ামতের দিন আখেরাতের জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই নেককার মানুষের জীবন যাপনের ধরন-ধারণাই পাল্টে যায় একইভাবে কাফের, মুনাফিকও পাপীদের জীবন যাপনের ধরনও ভিন্ন রূপ হয়ে যায় (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল আনফালঃ আয়াত ৫০; আন নাহলঃ আয়াত ২৮ ও ৩২ এবং টীকা ২৬; বনী ইসরাঈলঃ আয়াত ৯৭; ত্বা-হাঃ আয়াত ১০২, ১০৩ ও ১২৪ থেকে ১২৬ এবং টীকা ৭৯, ৮০ ও ১০৭; আল আম্বিয়াঃ আয়াত ১০৩ টীকা ৯৮; আল ফুরকানঃ আয়াত ২৪ও টীকা ৩৮; আন নামলঃ আয়াত ৮৯ ও টীকা ১০৯; সাবাঃ আয়াত ৫১ ও টীকা৭২; ইয়াসীনঃ আয়াত ২৬ও ২৭ এবং টীকা ২২-৩২; আল মু’মিনঃ আয়াত ৪৫ ও ৪৬ এবং টীকা ৬৩; মুহাম্মাদ, আয়াত ২৭ এবং টীকা ৩৭;  ক্বাফঃ আয়াত ১৯থেকে ২৩ পর্যন্ত টীকা ২২, ২৩ ও ২৫)

১৩. অর্থাৎ আমলনামা পাওয়ার সাথে সাথেই তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে এবং নিজের বন্ধু-বান্ধবদের তা দেখাবে সূরা ইনশিকাকের ৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “সে আনন্দ চিত্তে আপনজনদের কাছে ফিরে যাবে।”

﴿إِنِّى ظَنَنتُ أَنِّى مُلَـٰقٍ حِسَابِيَهْ﴾

২০ আমি জানতাম, আমাকে হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে১৪

১৪. অর্থাৎ তারা তাদের এ সৌভাগ্যের কারণ হিসেবে বলবে যে, দুনিয়ার জীবনে তারা আখেরাতকে ভুলে ছিল না বরং একদিন তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে সব কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে এ বিশ্বাস নিয়েই তারা সেখানে জীবন যাপন করেছিল

﴿فَهُوَ فِى عِيشَةٍۢ رَّاضِيَةٍۢ﴾

২১ তাই সে মনের মত আরাম আয়েশের মধ্যে থাকবে

﴿فِى جَنَّةٍ عَالِيَةٍۢ﴾

২২ উন্নত মর্যাদার জান্নাতে 

﴿قُطُوفُهَا دَانِيَةٌۭ﴾

২৩ যার ফলের গুচ্ছসমূহ নাগালের সীমায় অবনমিত হয়ে থাকবে 

﴿كُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ هَنِيٓـًٔۢا بِمَآ أَسْلَفْتُمْ فِى ٱلْأَيَّامِ ٱلْخَالِيَةِ﴾

২৪ (এসব লোকদের কে বলা হবেঃ) অতীত দিনগুলোতে তোমরা যা করে এসেছো তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো 

﴿وَأَمَّا مَنْ أُوتِىَ كِتَـٰبَهُۥ بِشِمَالِهِۦ فَيَقُولُ يَـٰلَيْتَنِى لَمْ أُوتَ كِتَـٰبِيَهْ﴾

২৫ আর যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেয়া হবে১৫ সে বলবেঃ হায়! আমার আমলনামা যদি আমাকে আদৌ দেয়া না হতো১৬

১৫. সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে, “আর যাকে পিছন দিক থেকে আমলনামা দেয়া হবে” সম্ভবত তা হবে এভাবে, অপরাধীর প্রথম থেকেই তার অপরাধী হওয়ার বিষয়টি জানা থাকবে তার আমলনামায় কি আছে তাও ঠিকঠাক তার জানা থাকবে তাই সে অত্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁ হাত বাড়িয়ে তা গ্রহণ করবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিজের পেছনের দিকে লুকিয়ে ফেলবে যাতে কেউ তা দেখতে না পায়

১৬. অর্থাৎ হাশরের ময়দানে প্রকাশ্যে আমার হাতে এ আমলনামা দিয়ে সবার সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত না করে যে শাস্তি দেয়ার তা দিয়ে ফেললেই ভালো হতো

﴿وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ﴾

২৬ এবং আমার হিসেব যদি আমি আদৌ না জানতাম তাহলে কতই না ভাল হত১৭ 

১৭. অর্থাৎ পৃথিবীতে আমি যা করে এসেছি তা যদি আমাকে আদৌ বলা না হতো এ আয়াতের আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, আমি ইতিপূর্বে আদৌ জানতাম না যে, হিসেব কি জিনিস কোনদিন আমার কল্পনাও আসেনি যে, আমাকে একদিন আমার কার্যাবলীর হিসেব দিতে হবে এবং আমার অতীত কাজ-কর্ম সব আমার সামনে পেশ করা হবে

﴿يَـٰلَيْتَهَا كَانَتِ ٱلْقَاضِيَةَ﴾

২৭ হায়! আমার সেই মৃত্যুই (যা দুনিয়াতে এসেছিলো) যদি চূড়ান্ত হতো১৮ 

১৮. অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন আমার মৃত্যুবরণের পর সবকিছু যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো এবং আর কোন জীবন যদি না থাকতো

﴿مَآ أَغْنَىٰ عَنِّى مَالِيَهْ ۜ﴾

২৮ আজ আমার অর্থ-সম্পদ কোন কাজে আসলো না 

﴿هَلَكَ عَنِّى سُلْطَـٰنِيَهْ﴾

২৯ আমার সব ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছে১৯ 

১৯. মূল আয়াতে আছে هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ  (হালাকা আন্নি সুলতানিয়া) سلطان  সুলতান শব্দটি দলীল-প্রমাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয় আবার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থেও ব্যবহৃত হয় দলিল-প্রমাণ অর্থে গ্রহণ করলে তার অর্থ হবে, আমি দলীল ও যুক্তি-প্রমাণের যে তুবড়ি ছুটাতাম তা আর এখানে চলবে না এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের মত কোন প্রমাণই আমার কাছে নেই আর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থে গ্রহণ করলে তার অর্থ হবে, আমি যে শক্তিতে বলীয়ান হয়ে পৃথিবীতে বুক টান করে চলতাম তা খতম হয়ে গিয়েছে এখানে আমার কোন দলবল বা সেনাবাহিনী নেই, আমার আদেশ মেনে চলারও কেউ নেই এখানে তো আমি এমন একজন অসহায় মানুষের মত দাঁড়িয়ে আছি যে আত্মরক্ষার জন্যও কিছু করতে সক্ষম নয়

﴿خُذُوهُ فَغُلُّوهُ﴾

৩০ (আদেশ দেয়া হবে) পাকড়াও করো ওকে আর ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও

﴿ثُمَّ ٱلْجَحِيمَ صَلُّوهُ﴾

৩১ তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো 

﴿ثُمَّ فِى سِلْسِلَةٍۢ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًۭا فَٱسْلُكُوهُ﴾

৩২ এবং সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো 

﴿إِنَّهُۥ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ ٱلْعَظِيمِ﴾

৩৩ সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করতো না 

﴿وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ﴾

৩৪ এবং দুস্থ মানুষের খাদ্য দিতে উৎসাহিত করতো না২০ 

২০. অর্থাৎ নিজে কোন দরিদ্রকে খাবার দেয়া তো দূরের কথা কাউকে এতটুকু কথা বলাও পছন্দ করতো না যে, আল্লাহর ক্ষুধা ক্লিষ্ট বান্দাদের খাদ্য দান করো

﴿فَلَيْسَ لَهُ ٱلْيَوْمَ هَـٰهُنَا حَمِيمٌۭ﴾

৩৫ তাই আজকে এখানে তার সমব্যথী কোন বন্ধু নেই

﴿وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍۢ﴾

৩৬ আর কোন খাদ্যও নেই ক্ষত নিঃসৃত পুঁজ-রক্ত ছাড়া 

﴿لَّا يَأْكُلُهُۥٓ إِلَّا ٱلْخَـٰطِـُٔونَ﴾

৩৭ যা পাপীরা ছাড়া আর কেউ খাবে না 

﴿فَلَآ أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ﴾

৩৮ অতএব তা নয়২১ আমি শপথ করছি ঐ সব জিনিসের ও যা তোমরা দেখতে পাও 

২১. অর্থাৎ তোমরা যা মনে করে নিয়েছো ব্যাপার তা নয়

﴿وَمَا لَا تُبْصِرُونَ﴾

৩৯ এবং ঐসব জিনিসের যা তোমরা দেখতে পাওনা 

﴿إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍۢ كَرِيمٍۢ﴾

৪০ এটা একজন সম্মানিত রাসূলের বাণী২২

২২. এখানে সম্মানিত রাসূল মানে হযরত মুহাম্মাদ সা. কিন্তু সূরা তাকবীরে (আয়াতঃ ১৯) সম্মানিত রাসূলের যে উল্লেখ আছে তার অর্থ হযরত জিবরাঈল আ. এখানে যে রাসূলুল্লাহ সা.কেই সম্মানিত রাসূল বলা হয়েছে তার প্রমাণ হলো, কুরআনকে সম্মানিত রাসূলের বাণী বলার পরেই বলা হয়েছে যে তা কোন কবি বা গণকের কথা নয় আর একথা সবারই জানা যে, মক্কার কাফেররা হযরত মুহাম্মাদ সা.কেই কবি বা গণক বলতো তারা জিবরাঈল আ. কে কবি বা গণক বলতো না পক্ষান্তরে সূরা তাকবীরে কুরআন মজীদকে সম্মানিত রাসূলের বাণী বলার পরে বলা হয়েছে যে, সে রাসূল অত্যন্ত শক্তিশালী, আরশের অধিপতির কাছে উচ্চমর্যাদার অধিকারী, সেখানে তাঁর কথা গ্রহণ করা হয়, তিনি বিশ্বস্তও আমানতদার এবং মুহাম্মাদ সা. তাঁকে পরিষ্কার দিগন্তে দেখেছেন সূরা নাজমের ৫ থেকে ১০ আয়াতে জিবরাঈল আ. সম্পর্কে প্রায় এ একই বিষয় বর্ণিত হয়েছে

এখানে একটি প্রশ্ন জাগে তাহলো, কুরআনকে মুহাম্মাদ সা. ও জিবরাঈল আ. এর বাণী বলার তাৎপর্য কি? এর জওয়াব হলো, মানুষ কুরআনের এ বাণী শুনতো রাসূলুল্লাহ সা. এর মুখ থেকে এবং রাসূলুল্লাহ সা. শুনতেন জিবরাঈল আ. এর মুখ থেকে তাই এক বিচারে এটি ছিল নবী সা. এর বানী এবং আরেক বিচারে এটি হযরত জিবরাঈল আ. এর বাণী কিন্তু পরক্ষণেই বিষয়টি স্পস্ট করে বলে দেয়া হয়েছে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এ হচ্ছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের রবের নাযিলকৃত বাণী তবে তা মুহাম্মাদ সা.কে জিবরাঈলের মুখ থেকে এবং লোকদেরকে মুহাম্মাদ সা. এর মুখ থেকে শুনানো হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সা. এর নিজের কথা থেকেও এ সত্যটিই ফুটে উঠে তিনি বলেছেন যে, এসব তাদের দুজনের কথা নয় বরং বার্তাবাহক হিসেবে তাঁর এ বাণী মূল বাণী প্রেরকের পক্ষ থেকে পেশ করেছেন

﴿وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍۢ ۚ قَلِيلًۭا مَّا تُؤْمِنُونَ﴾

৪১ কোন কবির কাব্য নয় তোমরা খুব কমই ঈমান পোষণ করে থাকো২৩ 

২৩. “কমই ঈমান পোষণ করে থাকো” প্রচলিত আরবী বাকরীতি অনুসারে এর একটি অর্থ হতে পারে তোমরা আদৌ ঈমান পোষণ করো না এর আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, কুরআন শুনে কোন সময় তোমাদের মন হয়তো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বলে ওঠে যে, এটা মানুষের কথা হতে পারে না কিন্তু তোমরা নিজেদের হঠকারিতার ওপর অবিচল রয়েছ এবং এ বানীর ওপর ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকো

﴿وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍۢ ۚ قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ﴾

৪২ আর এটা কোন গণকের গণনাও নয় তোমরা খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করে থাকো 

﴿تَنزِيلٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ﴾

৪৩ এ বাণী বিশ্ব-জাহানের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত২৪ 

২৪. সারকথা হলো তোমরা যা কিছু দেখতে পাও এবং যা কিছু দেখতে পাও না তার কসম আমি এ জন্য করছি যে, এ কুরআন কোন কবি বা গণকের কথা নয় বরং সারা বিশ্ব-জাহানের রবের নাযিলকৃত বাণী এ বাণী এমন এক রাসূলের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে যিনি মর্যাদাবান (অত্যন্ত সম্মানিত ও ভদ্র) এখন দেখা যাক কসম করার উদ্দেশ্য কি? লোকজন যা কিছু দেখতে পাচ্ছিল তাহলোঃ

একঃ এ বাণী এমন ব্যক্তি পেশ করেছিলেন যার মার্জিত ও ভদ্র স্বভাবের বিষয়টি মক্কা শহরের কারোই অজানা ছিল না সমাজের সবাই একথা জানতো যে, নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে তিনি তাদের জাতির মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এরূপ লোক আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করবে এবং নিজে কোন কথা বানিয়ে মহান আল্লাহর কথা বলে তা চালিয়ে দেবে, এত বড় মিথ্যার বেসাতি এ লোকের কাছ থেকে আশা করা যায় না

দুইঃ তারা আরো দেখছিল যে, এ ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হয়ে এ বাণী পেশ করছে না বরং এ কাজ করতে গিয়ে সে নিজের স্বার্থকেই জলাঞ্জলি দিয়েছে এ কাজ করতে গিয়ে সে নিজের ব্যবসায়-বাণিজ্য ধ্বংস করেছে, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছে, যে সমাজে তাকে অভাবনীয় সম্মান দেখানো হতো সেখানেই তাকে গালিগালিজের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, আর এসব করে নিজেই যে শুধু দুঃখ-দুর্দশার মুখে ঠেলে দিয়েছে ব্যক্তি স্বার্থের পূজারী হলে সে নিজেকে এ দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে টেনে আনবে কেন?

তিনঃ তারা নিজের চোখে এও দেখেছিলো যে, তাদের সমাজের যেসব লোক ঐ ব্যক্তির প্রতি ঈমান আনছিলো তাদের জীবনে হঠাৎ একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়ে যাচ্ছে কোন কবি অথবা গণকের কথার এতটা প্রভাব কি কখনো দেখা গিয়েছে যে তা মানুষের মধ্যে ব্যাপক নৈতিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে আর তার অনুসারীরা এ জন্য সব রকমের বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে?

চারঃ কবিদের ভাষা কেমন হয়ে থাকে এবং গণকদের কথাবার্তা কিরূপ হয় তাও তাদের অজানা ছিল না কুরআনের ভাষা, সাহিত্য ও বিষয়বস্তুকে কবির কাব্য এবং গণকের গণনা সদৃশ বলা একমাত্র হঠকারী ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না (আমি এ বিষয়ে তাফহীমুল কোরআনের সূরা আল আম্বিয়ার ৭ নং টীকায় সূরা আশ শুআ’রার ১৪২ থেকে ১৪৫ নং টীকায় এবং সূরা আত্ তূরের ২২ নং টীকায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি)

পাঁচঃ সমগ্র আরব ভূমিতে উন্নত ভাষাশৈলীর অধিকারী এমন কোন ব্যক্তি ছিল না যার চমকপ্রদ ও অলংকারময় ভাষাকে কুরআনের মোকাবিলায় পেশ করা যেতো কুরআনের সমকক্ষ হওয়া তো দূরের কথা কারো ভাষার বিশুদ্ধতা ও শ্রুতিমাধুর্য কুরআনের উন্নত ভাষাশৈলীর ধারে কাছে ঘেঁষারও যোগ্যতা রাখতো না এ বিষয়টিও তাদের জানা ছিল

ছয়ঃ মুহাম্মাদ সা. নিজের কথাবার্তা ও ভাষার সাহিত্যিক উৎকর্ষ ও কুরআনের সাহিত্যিক মান ও উৎকর্ষ থেকে যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিল তাও তাদের অগোচরে ছিল না আরবী ভাষাভাষী কোন ব্যক্তি নবী সা. এর বক্তৃতা এবং কুরআন শোনার পর বলতে পারতো না যে, এ দু’টি একই ব্যক্তির মুখের কথা

সাতঃ যেসব বিষয়বস্তু ও জ্ঞান-বিজ্ঞান কুরআনে পেশ করা হয়েছে নবুওয়াত দাবী করার একদিন আগেও মক্কার লোকেরা মুহাম্মাদ সা. এর মুখ থেকে তা শোনেনি তারা এও জানতো যে তাঁর কাছে এসব তথ্য ও বিষয়বস্তু জানার কোন উপায়-উপকরণ ও নেই তাই নবী সা. কোন গোপনীয় সূত্র থেকে এসব তথ্য ও জ্ঞান লাভ করেছেন বলে তাঁর বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলেও মক্কার কেউ-ই তা বিশ্বাস করতো না (আমি তাফহীমুল কোরআনের সূরা আন নাহলের ১০৭ নং টীকা এবং সূরা আল ফুরকানের ১২ নং টীকায় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করেছি)

আটঃ এ পৃথিবী থেকে সুদূর আসমান তথা মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত এ বিরাট-বিশাল বিশ্ব-জাহানকে তারা নিজ চোখে সুচারু রূপে পরিচালিত হতে দেখছিল তারা এও দেখছিলো যে, এ বিশাল বিশ্বলোক একটি জ্ঞানগর্ভ আইন-বিধান এবং সর্বব্যাপী নিয়ম-শৃংখলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে আরবের লোকেরা শিরকে লিপ্ত ছিল এবং আখেরাত অস্বীকার করতো এটা ছিল তাদের আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্গত কিন্তু এ বিশাল বিশ্বলোকের পরিচালনা ও নিয়ম-শৃংখলার কোন ক্ষেত্রেই তারা শিরক ও আখেরাত অস্বীকৃতির পক্ষে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজে পেতো না বরং কুরআন তাওহীদ ও আখেরাতের যে ধারণা পেশ করছে সর্বত্র তারই সত্যতার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়

এসবই তারা দেখতে পাচ্ছিল কিন্তু যেসব জিনিস তারা দেখতে পাচ্ছিল না তাহলো, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ তাআলাই এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা, মালিক এবং শাসক, বিশ্ব-জাহানের সবাই তাঁর বান্দা একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ ইলাহ নয়, কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, আল্লাহ‌ তাআলাই মুহাম্মাদ সা.কে রাসূল করে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাঁর ওপর কুরআন নাযিল হচ্ছে পূর্বোক্ত আয়াত গুলোতে যা বলা হয়েছে তা বলা হয়েছে এ দু’ধরনের সত্যের কসম খেয়ে

﴿وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ ٱلْأَقَاوِيلِ﴾

৪৪ যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো 

﴿لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِٱلْيَمِينِ﴾

৪৫ তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম

﴿ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ ٱلْوَتِينَ﴾

৪৬ এবং ঘাড়ের রগ কেটে দিতাম 

﴿فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَـٰجِزِينَ﴾

৪৭ তোমাদের কেউ-ই (আমাকে) এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না২৫ 

২৫. নিজের পক্ষ থেকে অহীর মধ্যে কম বেশী করার ইখতিয়ার নবীর নেই, নবী যদি এ কাজ করে তাহলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেবো, একথাটি বলাই এ আয়াতের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এথাটি বলতে যে বাচনভংগী গ্রহণ করা হয়েছে তাতে চোখের সামনে এমন একটি চিত্র ভেসে উঠে যে, বাদশাহর নিযুক্ত কর্মচারী বাদশাহের নামে জালিয়াতী করলে তিনি তাকে পাকড়াও করে তার গর্দান মেরে দেবেন কিছু লোক এ আয়াত থেকে এ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করলে তৎক্ষণাৎ আল্লাহর তরফ থেকে যদি তার গর্দানের রগ কেটে দেয়া না হয় তাহলে এটা হবে তার নবী হওয়ার প্রমাণ অথচ এ আয়াতে যা বলা হয়েছে তা সত্য নবী সম্পর্কে বলা হয়েছে নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার সম্পর্কে তা প্রযোজ্য নয় মিথ্যা দাবীদার তো শুধু নবুওয়াতের দাবীই করে না, খোদায়ীর দাবী পর্যন্ত করে বসে এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে বুক ফুলিয়ে চলে এটা তাদের সত্য হওয়ার কোন প্রমাণ নয় (আমি তাফহীমুল কোরআনের সূরা ইউনুসের ২৩ নং টীকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি)

﴿وَإِنَّهُۥ لَتَذْكِرَةٌۭ لِّلْمُتَّقِينَ﴾

৪৮ আসলে এটি আল্লাহভীরু লোকদের জন্য একটি নসীহত২৬ 

২৬. অর্থাৎ যারা ভুল-ভ্রান্তি ও তার খারাপ পরিণাম থেকে রক্ষা পেতে চায় কুরআন তাদের জন্য উপদেশ বাণী (আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আল বাকারাহঃ টীকা ৩)

﴿وَإِنَّا لَنَعْلَمُ أَنَّ مِنكُم مُّكَذِّبِينَ﴾

৪৯ আমি জানি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকবে 

﴿وَإِنَّهُۥ لَحَسْرَةٌ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ﴾

৫০ নিশ্চিতভাবে তা এসব কাফেরদের জন্য অনুতাপ ও আফসোসের২৭ কারণ হবে

২৭. অর্থাৎ পরিশেষে তাদেরকে এ জন্য অনুশোচনা করতে হবে যে, কেন তারা কুরআনকে মিথ্যা মনে করেছিল!

﴿وَإِنَّهُۥ لَحَقُّ ٱلْيَقِينِ﴾

৫১ এটি অবশ্যই এক নিশ্চিত সত্য 

﴿فَسَبِّحْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلْعَظِيمِ﴾

৫২ অতএব হে নবী, তুমি তোমার মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করো

 

— সমাপ্ত —

শেয়ারঃ

সম্পাদকের ব্লগ

অনলাইন পাঠাগার

অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ

সকল সূরা

০০১

আল ফাতিহা

মাক্কী

৭ আয়াত

০০২

আল বাকারাহ

মাদানী

২৮৬ আয়াত

০০৩

আলে ইমরান

মাদানী

২০০ আয়াত

০০৪

আন নিসা

মাদানী

১৭৬ আয়াত

০০৫

আল মায়িদাহ

মাদানী

১২০ আয়াত

০০৬

আল আনআ’ম

মাক্কী

১৬৫ আয়াত

০০৭

আল আ’রাফ

মাক্কী

২০৬ আয়াত

০০৮

আল আনফাল

মাদানী

৭৫ আয়াত

০০৯

আত তাওবা

মাদানী

১২৯ আয়াত

০১০

ইউনুস

মাক্কী

১০৯ আয়াত

০১১

হূদ

মাক্কী

১২৩ আয়াত

০১২

ইউসুফ

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৩

আর রা’দ

মাক্কী

৪৩ আয়াত

০১৪

ইব্রাহীম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০১৫

আল হিজর

মাক্কী

৯৯ আয়াত

০১৬

আন নাহল

মাক্কী

১২৮ আয়াত

০১৭

বনী ইসরাঈল

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৮

আল কাহফ

মাক্কী

১১০ আয়াত

মারইয়াম

০২০

ত্বা-হা

মাক্কী

১৩৫ আয়াত

০২১

আল আম্বিয়া

মাক্কী

১১২ আয়াত

০২২

আল হাজ্জ

মাদানী

৭৮ আয়াত

০২৩

আল মু’মিনূন

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৪

আন নূর

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৫

আল ফুরকান

মাক্কী

৭৭ আয়াত

০২৬

আশ শুআ’রা

মাক্কী

২২৭ আয়াত

০২৭

আন নামল

মাক্কী

৯৩ আয়াত

০২৮

আল কাসাস

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০২৯

আল আনকাবূত

মাক্কী

৬৯ আয়াত

০৩০

আর রূম

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৩১

লুকমান

মাক্কী

৩৪ আয়াত

০৩২

আস সাজদাহ

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৩৩

আল আহযাব

মাদানী

৭৩ আয়াত

০৩৪

আস সাবা

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৫

ফাতির

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৬

ইয়াসিন

মাক্কী

৮৩ আয়াত

০৩৭

আস সাফফাত

মাক্কী

১৮২ আয়াত

০৩৮

ছোয়াদ

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৩৯

আয যুমার

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৪০

আল মু’মিন

মাক্কী

৮৫ আয়াত

০৪১

হা-মীম আস সাজদাহ

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৪২

আশ শূরা

মাক্কী

৫৩ আয়াত

০৪৩

আয যুখরুফ

মাক্কী

৮৯ আয়াত

০৪৪

আদ দুখান

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৫

আল জাসিয়াহ

মাক্কী

৩৭ আয়াত

০৪৬

আল আহক্বাফ

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৭

মুহাম্মাদ

মাদানী

৩৮ আয়াত

০৪৮

আল ফাতহ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৪৯

আল হুজুরাত

মাদানী

১৮ আয়াত

০৫০

ক্বাফ

মাদানী

৪৫ আয়াত

০৫১

আয যারিয়াত

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৫২

আত তূর

মাক্কী

৪৯ আয়াত

০৫৩

আন নাজম

মাক্কী

৬২ আয়াত

০৫৪

আল ক্বামার

মাক্কী

৫৫ আয়াত

০৫৫

আর রাহমান

মাদানী

৭৮ আয়াত

০৫৬

আল ওয়াকিআ’

মাক্কী

৯৬ আয়াত

০৫৭

আল হাদীদ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৫৮

আল মুজাদালাহ

মাদানী

২২ আয়াত

০৫৯

আল হাশর

মাদানী

২২ আয়াত

০৬০

আল মুমতাহিনাহ

মাদানী

১৩৫ আয়াত

০৬১

আস সাফ

মাদানী

১৪ আয়াত

০৬২

আল জুমুআ’

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৩

আল মুনাফিকুন

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৪

আত তাগাবুন

মাদানী

১৮ আয়াত

০৬৫

আত তালাক্ব

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৬

আত তাহরীম

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৭

আল মুলক

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৬৮

আল কালাম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৬৯

আল হাককাহ

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৭০

আল মাআ’রিজ

মাক্কী

৪৪ আয়াত

০৭১

নূহ

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭২

আল জিন

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭৩

আল মুযযাম্মিল

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৪

আল মুদ্দাসসির

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৫

আল কিয়ামাহ

মাক্কী

৪০ আয়াত

০৭৬

আদ দাহর

মাদানী

৩১ আয়াত

০৭৭

আল মুরসালাত

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৮

আন নাবা

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৯

আন নাযিআ’ত

মাক্কী

৪৬ আয়াত

০৮০

আবাসা

মাক্কী

৪২ আয়াত

০৮১

আত তাকবীর

মাক্কী

২৯ আয়াত

০৮২

আল ইনফিতার

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৩

আল মুতাফফিফীন

মাক্কী

৩৬ আয়াত

০৮৪

আল ইনশিকাক

মাক্কী

২৫ আয়াত

০৮৫

আল বুরূজ

মাক্কী

২২ আয়াত

০৮৬

আত তারিক

মাক্কী

১৭ আয়াত

০৮৭

আল আ’লা

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৮

আল গাশিয়াহ

মাক্কী

২৬ আয়াত

০৮৯

আল ফাজর

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৯০

আল বালাদ

মাক্কী

২০ আয়াত

০৯১

আশ শামস

মাক্কী

১৫ আয়াত

০৯২

আল লাইল

মাক্কী

২১ আয়াত

০৯৩

আদ দুহা

মাক্কী

১১ আয়াত

০৯৪

আলাম নাশরাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৫

আত তীন

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৬

আল আলাক

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৯৭

আল কাদর

মাক্কী

৫ আয়াত

০৯৮

আল বাইয়্যিনাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৯

আল যিলযাল

মাদানী

৮ আয়াত

১০০

আল আ’দিয়াত

মাক্কী

১১ আয়াত

১০১

আল কারিআ’হ

মাক্কী

১১ আয়াত

১০২

আত তাকাসুর

মাক্কী

৮ আয়াত

১০৩

আল আসর

মাদানী

৮ আয়াত

১০৪

আল হুমাযাহ

মাক্কী

৯ আয়াত

১০৫

আল ফীল

মাক্কী

৫ আয়াত

১০৬

কুরাইশ

মাক্কী

৪ আয়াত

১০৭

আল মাউন

মাক্কী

৭ আয়াত

১০৮

আল কাউসার

মাক্কী

৩ আয়াত

১০৯

আল কাফিরূন

মাক্কী

৬ আয়াত

১১০

আন নাসর

মাদানী

৩ আয়াত

১১১

আল লাহাব

মাক্কী

৫ আয়াত

১১২

আল ইখলাস

মাক্কী

৪ আয়াত

১১৩

আল ফালাক

মাক্কী

৫ আয়াত

১১৪

আন নাস

মাক্কী

৬ আয়াত