আল ইনশিকাক

নামকরণঃ

প্রথম আয়াতের اِنْشَقَّتْ  শব্দটি থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে। এর মূলে রয়েছে اِنْشَقَّاق শব্দ। ইনশিকাক মানে ফেটে যাওয়া। অর্থাৎ এ নামকরণের মাধ্যমে একথা বলতে চাওয়া হয়েছে যে, এটি এমন একটি সূরা যাতে আকাশের ফেটে যাওয়ার উল্লেখ আছে।

নাযিলের সময়-কালঃ

এটি মক্কা মুআ’যমার প্রথম যুগে অবতীর্ণ সূরা গুলোর অন্তর্ভুক্ত। এ সূরার মধ্যে যেসব বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে তার আভ্যন্তরীণ বক্তব্য ও প্রমাণপত্র থেকে একথা জানা যায় যে, যখন এ সূরাটি নাযিল হয় তখন জুলুম-নিপীড়নের ধারাবাহিকতা শুরু হয়নি। তবে কুরআনের দাওয়াতকে তখন মক্কায় প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছিল। একদিন কিয়ামত হবে এবং সমস্ত মানুষকে আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে একথা মেনে নিতে লোকেরা অস্বীকার করছিল।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

এ সূরাটির বিষয়বস্তু হচ্ছে কিয়ামত ও আখেরাত। প্রথম পাঁচটি আয়াতে কেবল কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করা হয়নি। বরং এ সংগে কিয়ামত যে সত্যিই অনুষ্ঠিত হবে তার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। তার অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ সেদিন আকাশ ফেটে যাবে পৃথিবীকে ছড়িয়ে দিয়ে একটি সমতল ময়দানে পরিণত করা হবে। পৃথিবীর পেটে যা কিছু আছে (অর্থাৎ মৃত মানুষের শরীরের অংশসমূহ এবং তাদের কার্যাবলীর বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ) সব বের করে বাইরে ফেলে দেয়া হবে। এমনকি তার মধ্যে আর কিছুই থাকবে না। এর সপক্ষে যুক্তি পেশ করে বলা হয়েছে, আকাশ ও পৃথিবীর জন্য এটিই হবে তাদের রবের হুকুম। আর যেহেতু এ দু’টি আল্লাহর সৃষ্টি, কাজেই তারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে পারবে না। তাদের জন্য তাদের রবের হুকুম তামিল করাটাই সত্য।

এরপর ৬ থেকে ১৯ পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষ সচেতন বা অচেতন যে কোনভাবেই হোক না কেন সেই মনযিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে তার নিজেকে তার রবের সামনে পেশ করতে হবে। তখন সমস্ত মানুষ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একঃ যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। তাদেরকে কোন প্রকার কঠিন হিসেব-নিকেশের সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই সহজে মাফ করে দেয়া হবে। দুইঃ যাদের আমলনামা পিঠের দিকে দেয়া হবে। তারা চাইবে, কোনভাবে যদি তাদের মৃত্যু হতো। কিন্তু মৃত্যুর বদলে তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেয়া হবে। তারা দুনিয়ায় এই বিভ্রান্তিতে ডুবে ছিল যে, তাদেরকে কখনো আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে না। এ কারণে তারা এ পরিণতির সম্মুখীন হবে। অথচ তাদের রব তাদের সমস্ত কার্যক্রম দেখছিলেন। এসব কার্যক্রমের ব্যাপারে জবাবদিহি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার তাদের কোন কারণ ছিল না। দুনিয়ার কর্মজীবন থেকে আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কারের জীবন পর্যন্ত তাদের পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারটি ঠিক তেমনই নিশ্চিত যেমন সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে লাল আভা দেখা দেয়া, দিনের পরে রাতের আসা, সে সময় মানুষ ও সকল প্রাণীর নিজ নিজ ডেরায় ফিরে আসা এবং একাদশীর একফালি চাঁদের ধীরে ধীরে চতুরদশীর পূর্ণচন্দ্রে পরিণত হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত।

সবশেষে কাফেরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির খবর শুনানো হয়েছে। কারণ তারা কুরআনের বাণী শুনে আল্লাহর সামনে নত হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে। এ সংগে যারা ঈমান এনে নেক আমল করে তাদেরকে অগণিত পুরস্কার ও উত্তম প্রতিদানের সুখবর শুনানো হয়েছে।

তরজমা ও তাফসীর

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنشَقَّتْ﴾

যখন আকাশ ফেটে যাবে 

﴿وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ﴾

এবং নিজের রবের হুকুম পালন করবে আর (নিজের রবের হুকুম মেনে চলা), এটিই তার জন্য সত্য

১. মূলে اَذِنَتْ لِرَبِّحَا শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে এর শাব্দিক মানে হয়, “সে নিজের রবের হুকুম শুনবে” কিন্তু আরবী প্রবাদ অনুযায়ী اَذِنَ لَء এর মানে শুধু মাত্র হুকুম শুনা হয় না বরং এর মানে হয়, সে হুকুম শুনে একজন অনুগতের ন্যায় নির্দেশ পালন করেছে এবং একটুও অবাধ্যতা প্রকাশ করেনি

﴿وَإِذَا ٱلْأَرْضُ مُدَّتْ﴾

আর পৃথিবীকে যখন ছড়িয়ে দেয়া হবে

২. পৃথিবীকে ছড়িয়ে দেবার মানে হচ্ছে, সাগর, নদী ও সমস্ত জলাশয় ভরে দেয়া হবে পাহাড়গুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হবে পৃথিবীর সমস্ত উঁচু নীচু জায়গা সমান করে সমগ্র পৃথিবীটাকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে সূরা ত্বা-হা’য় এই অবস্থাটিকে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ মহান আল্লাহ “তাকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন সেখানে তোমরা কোন উঁচু জায়গা ও ভাঁজ দেখতে পাবে না” (আয়াতঃ ১০৬-১০৭) হাকেম মুস্তাদ্রা নির্ভরযোগ্য সনদ সহকারে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. এর বরাত দিয়ে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন তাতে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন পৃথিবীকে একটি দস্তরখানের মতো খুলে বিছিয়ে দেয়া হবে তারপর মানুষের জন্য সেখানে কেবলমাত্র পা রাখার জায়গাই থাকবে” একথাটি ভালোভাবে বুঝে নেয়ার জন্য এ বিষয়টিও সামনে রাখতে হবে যে, সেদিন সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষের জন্ম হয়েছে ও হবে সবাইকে একই সঙ্গে জীবিত করে আল্লাহর আদালতে পেশ করা হবে এ বিরাট জনগোষ্ঠীকে এক জায়গায় দাঁড় করাবার জন্য সমস্ত সাগর, নদী, জলাশয়, পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, মালভূমি, তথা উঁচু-নীচু সব জায়গা ভেঙে-চুরে ভরাট করে সারা দুনিয়াটাকে একটি বিস্তীর্ণ প্রান্তরে পরিণত করা হবে

﴿وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ﴾

যা কিছু তার মধ্যে আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করে সে খালি হয়ে যাবে

৩. এর অর্থ হচ্ছে, যত মৃত মানুষ তার মধ্যে রয়েছে সবাইকে ঠেলে বাইরে বের করে দেবে আর এভাবে তাদের কৃতকর্মের যেসব প্রমাণপত্র তার মধ্যে রয়ে গেছে সেগুলোও পুরোপুরি বেরিয়ে আসবে কোন একটি জিনিসও তার মধ্যে লুকিয়ে বা গোপন থাকবে না

﴿وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ﴾

এবং নিজের রবের হুকুম পালন করবে আর (নিজের রবের হুকুম মেনে চলা), এটিই তার জন্য সত্য

৪. যখন এসব ঘটনাবলী ঘটবে তখন কি হবে, একথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি কারণ এ পরবর্তী বক্তব্যগুলো নিজে নিজেই তা প্রকাশ করে দিচ্ছে এ বক্তব্যগুলোতে বলা হচ্ছেঃ হে মানুষ! তুমি তোমার রবের দিকে এগিয়ে চলছো শীঘ্র তাঁর সামনে হাযির হয়ে যাবে তখন তোমার আমলনামা তোমার হাতে দেয়া হবে আর তোমার আমলনামা অনুযায়ী তোমাকে পুরস্কার দেয়া হবে

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْإِنسَـٰنُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدْحًۭا فَمُلَـٰقِيهِ﴾

হে মানুষ! তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে করতে তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো, পরে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে

৫. অর্থাৎ দুনিয়ায় তুমি যা কিছু কষ্ট সাধনা প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছ, সে সম্পর্কে তুমি মনে করতে পারো যে, তা কেবল দুনিয়ার জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং দুনিয়াবী স্বার্থ লাভ করাই তার উদ্দেশ্য কিন্তু আসলে তুমি সচেতন বা অচেতনভাবে নিজের রবের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছো এবং অবশেষে তোমাকে তাঁর কাছেই পৌঁছতে হবে

﴿فَأَمَّا مَنْ أُوتِىَ كِتَـٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ﴾

তারপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হয়েছে

﴿فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًۭا يَسِيرًۭا﴾

তার কাছ থেকে হালকা হিসেব নেয়া হবে

৬. অর্থাৎ তার হিসেব নেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হবে না তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না, উমুক উমুক কাজ তুমি কেন করেছিলে? ঐসব কাজ করার ব্যাপারে তোমার কাছে কি কি ওজর আছে? নেকীর সাথে সাথে গোনাহও অবশ্যি তার আমলনামায় লেখা থাকবে কিন্তু গোনাহের তুলনায় নেকীর পরিমাণ বেশী হবার কারণে তার অপরাধগুলো উপেক্ষা করা হবে এবং সেগুলো মাফ করে দেয়া হবে কুরআন মজিদে অসৎকর্মশীল লোকদের কঠিন হিসেব-নিকেশের জন্য اَذِنَ لَء “সু-উল হিসেব” (খারাপভাবে হিসেব নেয়া) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে (আর্ রা’দঃ ১৮) সৎ লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “এরা এমন লোক যাদের সৎকাজগুলো আমি গ্রহণ করে নেবো এবং অসৎকাজগুলো মাফ করে দেবো” (আল আহকাফঃ ১৬) রাসূলুল্লাহ সা. এর যে ব্যাখ্যা করেছেন তাকে ইমাম আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, হাকেম, ইবনে জারীর, আব্দ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে মারদুইয়া বিভিন্ন শব্দাবলীর সাহায্যে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন এক বর্ণনা মতে নবী সা. বলেছেনঃ “যার থেকেই হিসেব নেয়া হয়েছে, সে মারা পড়েছে

হযরত আয়েশা রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ কি একথা বলেননি, “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে তার থেকে হাল্কা হিসেব নেয়া হবে?” রাসূলুল্লাহ সা. জবাব দেনঃ “সেটি তো হলো কেবল আমলের উপস্থাপনা কিন্তু যাকে জিজ্ঞাসাবাঃদ করা হয়েছে সে মারা পড়েছে” আর একটি রেওয়ায়াতে হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি একবার নামাযে নবী সা.কে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে শুনিঃ “হে আল্লাহ! আমার থেকে হাল্কা হিসেব নাও” তিনি সালাম ফেরার পর আমি তাঁকে এর অর্থ জিজ্ঞেস করি তিনি বলেনঃ “হাল্কা হিসেব মানে বান্দার আমলনামা দেখা হবে এবং উপেক্ষা করা হবে হে আয়েশা! সেদিন যার কাছ থেকে হিসেব নেয়া হয়েছে সে মারা পড়েছে

﴿وَيَنقَلِبُ إِلَىٰٓ أَهْلِهِۦ مَسْرُورًۭا﴾

এবং সে হাসিমুখে নিজের লোকজনের কাছে ফিরে যাবে

৭. নিজের লোকজন বলতে পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও সাথী-সহযোগীদের কথা বুঝানো হয়েছে তাদেরকেও একইভাবে মাফ করে দেয়া হয়ে থাকবে

﴿وَأَمَّا مَنْ أُوتِىَ كِتَـٰبَهُۥ وَرَآءَ ظَهْرِهِۦ﴾

১০ আর যার আমলনামা তার পিছন দিক থেকে দেয়া হবে,

৮. সূরা আল হাক্কায় বলা হয়েছে, যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে আর এখানে বলা হয়েছে, তার পেছন দিক থেকে দেয়া হবে সম্ভবত এটা এভাবে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডান হাতে আমলনামা পাবার ব্যাপারে প্রথম থেকে নিরাশ হয়ে থাকবে কারণ নিজের কার্যক্রম তার ভালোভাবেই জানা থাকবে ফলে সে নিশ্চিতভাবে মনে করবে যে, তাকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে তবে সমস্ত মানুষের সামনে আমলনামা বাম হাতে নিতে সে লজ্জা অনুভব করবে তাই সে নিজের হাত পেছনের দিকে রাখবে কিন্তু এই চালাকি করে সে নিজের কৃতকর্মের ফল নিজের হাতে তুলে নেবার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না সে হাত সামনের দিকে রাখুক বা পেছনের দিকে অবশ্যি তার আমলনামা তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে

﴿فَسَوْفَ يَدْعُوا۟ ثُبُورًۭا﴾

১১ সে মৃত্যুকে ডাকবে 

﴿وَيَصْلَىٰ سَعِيرًا﴾

১২ এবং জ্বলন্ত আগুনে গিয়ে পড়বে 

﴿إِنَّهُۥ كَانَ فِىٓ أَهْلِهِۦ مَسْرُورًا﴾

১৩ সে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ডুবে ছিল

৯. অর্থাৎ তার অবস্থা ছিল আল্লাহর সৎবান্দাদের থেকে আলাদা আল্লাহর এই সৎ বান্দাদের সম্পর্কে সূরা ত্বা-হা’র ২৬ আয়াতে বলা হয়েছেঃ তারা নিজেদের পরিবারের লোকদের মধ্যে আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকদের জীবন যাপন করতো অর্থাৎ সবসময় তারা ভয় করতো নিজেদের সন্তান ও পরিবারের লোকদের প্রতি ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের পরকাল বরবাদ না করে ফেলে বিপরীত পক্ষে সেই ব্যক্তির অবস্থা ছিল এই যে, সে নিজের ঘরে আরামে সুখের জীবন যাপন করছিল সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের লোকজনদের বিলাসী জীবন যাপনের জন্য যতই হারাম পদ্ধতি অবলম্বন এবং অন্যের অধিকার হরণ করার প্রয়োজন হোক না কেন তা তারা করে চলছিল এই বিলাসী জীবন যাপন করতে গিয়ে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখাগুলোকে সে চোখ বন্ধ করে ধ্বংস করে চলছিল

﴿إِنَّهُۥ ظَنَّ أَن لَّن يَحُورَ﴾

১৪ সে মনে করেছিল, তাকে কখনো ফিরতে হবে না 

﴿بَلَىٰٓ إِنَّ رَبَّهُۥ كَانَ بِهِۦ بَصِيرًۭا﴾

১৫ না ফিরে সে পারতো কেমন করে? তার রব তার কার্যকলাপ দেখছিলেন১০

১০. অর্থাৎ সে যেসব কাজ কারবার করে যাচ্ছিল আল্লাহ সেগুলো উপেক্ষা করতেন এবং নিজের সামনে ডেকে তাকে কোন জিজ্ঞাসাবাঃদ করতেন না এমনটি ছিল আল্লাহর ইনসাফ ও হিকমতের পরিপন্থী

﴿فَلَآ أُقْسِمُ بِٱلشَّفَقِ﴾

১৬ কাজেই না আমি কসম খাচ্ছি

﴿وَٱلَّيْلِ وَمَا وَسَقَ﴾

১৭ আকাশের লাল আভার ও রাতের 

﴿وَٱلْقَمَرِ إِذَا ٱتَّسَقَ﴾

১৮ এবং তাতে যা কিছুর সমাবেশ ঘটে তার, আর চাঁদের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে 

﴿لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَن طَبَقٍۢ﴾

১৯ তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে১১

১১. অর্থাৎ তোমরা একই অবস্থার ওপর অপরিবর্তিত থাকবে না বরং যৌবন থেকে বার্ধক্য, বার্ধক্য থেকে মৃত্যু থেকে বরযখ (মৃত্যু ও কিয়ামতের মাঝখানের জীবন), বরযখ থেকে পুনরুজ্জীবন, পুনরুজ্জীবন থেকে হাশরের ময়দান তারপর হিসেব নিকেশ এবং শাস্তি ও পুরস্কারের অসংখ্য মনযিল তোমাদের অবশ্যি অতিক্রম করতে হবে এবিষয়ে তিনটি জিনিসের কসম খাওয়া হয়েছে সূর্য অস্ত যাবার পর পশ্চিম আকাশের লালিমার, দিনের পর রাত্রির আঁধারও তার মধ্যে দিনের বেলা যেসব মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী পৃথিবীর চারদিকে বিচরণ করে তাদের একত্রে হওয়ার এবং চাঁদের সরু কাস্তের মতো অবস্থা থেকে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে পূর্ণ চন্দ্রে পরিণত হওয়ার অন্য কথায় বলা যায়, এ জিনিসগুলো প্রকাশ্যে সাক্ষ্য প্রদান করছে যে, মানুষ যে বিশ্ব-জাহানে বসবাস করে সেখানে কোন স্থিতিশীলতা নেই সেখানে সর্বত্র একটি নিরন্তর পরিবর্তন ও ধারাবাহিক অবস্থান্তর প্রক্রিয়া কার্যকর রয়েছে কাজেই শেষ নিঃশ্বাসটা বের হয়ে যাবার সাথে সাথে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, মুশরিকদের এ ধারণা ঠিক নয়

﴿فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾

২০ তাহলে এদের কি হয়েছে, এরা ঈমান আনে না

﴿وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ ٱلْقُرْءَانُ لَا يَسْجُدُونَ ﴾

২১ এবং এদের সামনে কুরআন পড়া হলে এরা সিজদা করে না?১২

১২. অর্থাৎ এদের মনে আল্লাহর ভয় জাগে না এরা তাঁর সামনে মাথা নত করে না রাসূলুল্লাহ সা. এর কার্যক্রম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি কুরআনের এ আয়াতটি পড়ার সময় সিজদা করেছেন ইমাম মালেক, মুসলিম ও নাসাঈ হযরত আবু হুরাইরা রা. সম্পর্কে এ রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি নামাযে এ সূরাটি পড়ে এ জায়গায় সিজদা করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এ জায়গায় সিজদা করেছেন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ আবু রাফের একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তাতে তিনি বলেছেন, হযরত আবু হুরাইরা রা. এশার নামাযে এ সূরাটি পড়েন এবং সিজদা করেন আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আবুল কাসেম সা. এর পেছনে নামায পড়ি এবং তিনি এখানে সিজদা করেন তাই আমি আমৃত্যু এখানে সিজদা করে যেতে থাকবো মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ এবং আরো অনেকে অন্য একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন তাতে হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর পেছনে এই সূরায় এবং ‘ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাজী খালাক’ সূরায় সিজদা করেছি

﴿بَلِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُكَذِّبُونَ﴾

২২ বরং এ অস্বীকারকারীরা উল্টো মিথ্যা আরোপ করে 

﴿وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوعُونَ﴾

২৩ অথচ এরা নিজেদের আমলনামায় যা কিছু জমা করছে আল্লাহ‌ তা খুব ভালো করেই জানেন১৩

১৩. এর আর একটি অর্থ এও হতে পারে যে, এরা নিজেদের মনে কুফরী, হিংসা, সত্যের সাথে শত্রুতা এবং অন্যান্য খারাপ ইচ্ছা ও দুষ্ট সংকল্পের যে নোংরা আবর্জনা ভরে রেখেছে আল্লাহ‌ তা খুব ভালো করেই জানেন

﴿فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ﴾

২৪ কাজেই এদের যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও 

﴿إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍۭ﴾

২৫ তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার

 

— সমাপ্ত —

শেয়ারঃ

সম্পাদকের ব্লগ

অনলাইন পাঠাগার

অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ

সকল সূরা

০০১

আল ফাতিহা

মাক্কী

৭ আয়াত

০০২

আল বাকারাহ

মাদানী

২৮৬ আয়াত

০০৩

আলে ইমরান

মাদানী

২০০ আয়াত

০০৪

আন নিসা

মাদানী

১৭৬ আয়াত

০০৫

আল মায়িদাহ

মাদানী

১২০ আয়াত

০০৬

আল আনআ’ম

মাক্কী

১৬৫ আয়াত

০০৭

আল আ’রাফ

মাক্কী

২০৬ আয়াত

০০৮

আল আনফাল

মাদানী

৭৫ আয়াত

০০৯

আত তাওবা

মাদানী

১২৯ আয়াত

০১০

ইউনুস

মাক্কী

১০৯ আয়াত

০১১

হূদ

মাক্কী

১২৩ আয়াত

০১২

ইউসুফ

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৩

আর রা’দ

মাক্কী

৪৩ আয়াত

০১৪

ইব্রাহীম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০১৫

আল হিজর

মাক্কী

৯৯ আয়াত

০১৬

আন নাহল

মাক্কী

১২৮ আয়াত

০১৭

বনী ইসরাঈল

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৮

আল কাহফ

মাক্কী

১১০ আয়াত

মারইয়াম

০২০

ত্বা-হা

মাক্কী

১৩৫ আয়াত

০২১

আল আম্বিয়া

মাক্কী

১১২ আয়াত

০২২

আল হাজ্জ

মাদানী

৭৮ আয়াত

০২৩

আল মু’মিনূন

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৪

আন নূর

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৫

আল ফুরকান

মাক্কী

৭৭ আয়াত

০২৬

আশ শুআ’রা

মাক্কী

২২৭ আয়াত

০২৭

আন নামল

মাক্কী

৯৩ আয়াত

০২৮

আল কাসাস

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০২৯

আল আনকাবূত

মাক্কী

৬৯ আয়াত

০৩০

আর রূম

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৩১

লুকমান

মাক্কী

৩৪ আয়াত

০৩২

আস সাজদাহ

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৩৩

আল আহযাব

মাদানী

৭৩ আয়াত

০৩৪

আস সাবা

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৫

ফাতির

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৬

ইয়াসিন

মাক্কী

৮৩ আয়াত

০৩৭

আস সাফফাত

মাক্কী

১৮২ আয়াত

০৩৮

ছোয়াদ

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৩৯

আয যুমার

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৪০

আল মু’মিন

মাক্কী

৮৫ আয়াত

০৪১

হা-মীম আস সাজদাহ

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৪২

আশ শূরা

মাক্কী

৫৩ আয়াত

০৪৩

আয যুখরুফ

মাক্কী

৮৯ আয়াত

০৪৪

আদ দুখান

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৫

আল জাসিয়াহ

মাক্কী

৩৭ আয়াত

০৪৬

আল আহক্বাফ

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৭

মুহাম্মাদ

মাদানী

৩৮ আয়াত

০৪৮

আল ফাতহ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৪৯

আল হুজুরাত

মাদানী

১৮ আয়াত

০৫০

ক্বাফ

মাদানী

৪৫ আয়াত

০৫১

আয যারিয়াত

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৫২

আত তূর

মাক্কী

৪৯ আয়াত

০৫৩

আন নাজম

মাক্কী

৬২ আয়াত

০৫৪

আল ক্বামার

মাক্কী

৫৫ আয়াত

০৫৫

আর রাহমান

মাদানী

৭৮ আয়াত

০৫৬

আল ওয়াকিআ’

মাক্কী

৯৬ আয়াত

০৫৭

আল হাদীদ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৫৮

আল মুজাদালাহ

মাদানী

২২ আয়াত

০৫৯

আল হাশর

মাদানী

২২ আয়াত

০৬০

আল মুমতাহিনাহ

মাদানী

১৩৫ আয়াত

০৬১

আস সাফ

মাদানী

১৪ আয়াত

০৬২

আল জুমুআ’

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৩

আল মুনাফিকুন

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৪

আত তাগাবুন

মাদানী

১৮ আয়াত

০৬৫

আত তালাক্ব

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৬

আত তাহরীম

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৭

আল মুলক

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৬৮

আল কালাম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৬৯

আল হাককাহ

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৭০

আল মাআ’রিজ

মাক্কী

৪৪ আয়াত

০৭১

নূহ

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭২

আল জিন

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭৩

আল মুযযাম্মিল

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৪

আল মুদ্দাসসির

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৫

আল কিয়ামাহ

মাক্কী

৪০ আয়াত

০৭৬

আদ দাহর

মাদানী

৩১ আয়াত

০৭৭

আল মুরসালাত

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৮

আন নাবা

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৯

আন নাযিআ’ত

মাক্কী

৪৬ আয়াত

০৮০

আবাসা

মাক্কী

৪২ আয়াত

০৮১

আত তাকবীর

মাক্কী

২৯ আয়াত

০৮২

আল ইনফিতার

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৩

আল মুতাফফিফীন

মাক্কী

৩৬ আয়াত

০৮৪

আল ইনশিকাক

মাক্কী

২৫ আয়াত

০৮৫

আল বুরূজ

মাক্কী

২২ আয়াত

০৮৬

আত তারিক

মাক্কী

১৭ আয়াত

০৮৭

আল আ’লা

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৮

আল গাশিয়াহ

মাক্কী

২৬ আয়াত

০৮৯

আল ফাজর

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৯০

আল বালাদ

মাক্কী

২০ আয়াত

০৯১

আশ শামস

মাক্কী

১৫ আয়াত

০৯২

আল লাইল

মাক্কী

২১ আয়াত

০৯৩

আদ দুহা

মাক্কী

১১ আয়াত

০৯৪

আলাম নাশরাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৫

আত তীন

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৬

আল আলাক

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৯৭

আল কাদর

মাক্কী

৫ আয়াত

০৯৮

আল বাইয়্যিনাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৯

আল যিলযাল

মাদানী

৮ আয়াত

১০০

আল আ’দিয়াত

মাক্কী

১১ আয়াত

১০১

আল কারিআ’হ

মাক্কী

১১ আয়াত

১০২

আত তাকাসুর

মাক্কী

৮ আয়াত

১০৩

আল আসর

মাদানী

৮ আয়াত

১০৪

আল হুমাযাহ

মাক্কী

৯ আয়াত

১০৫

আল ফীল

মাক্কী

৫ আয়াত

১০৬

কুরাইশ

মাক্কী

৪ আয়াত

১০৭

আল মাউন

মাক্কী

৭ আয়াত

১০৮

আল কাউসার

মাক্কী

৩ আয়াত

১০৯

আল কাফিরূন

মাক্কী

৬ আয়াত

১১০

আন নাসর

মাদানী

৩ আয়াত

১১১

আল লাহাব

মাক্কী

৫ আয়াত

১১২

আল ইখলাস

মাক্কী

৪ আয়াত

১১৩

আল ফালাক

মাক্কী

৫ আয়াত

১১৪

আন নাস

মাক্কী

৬ আয়াত