আদ দুহা

নামকরণঃ

সূরার প্রথম শব্দ ওয়াদদুহা (وَالضُّحٰىۙ‏) কে এই সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কালঃ

এই সূরার বক্তব্য বিষয় থেকে একথা পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এটি মক্কা মুআ’যযমার প্রথম যুগে নাযিল হয়। হাদীস থেকে ও জানা যায়, কিছুদিন অহীর অবতরণ বন্ধ ছিল। এ জন্য নবী সা. অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। বারবার তাঁর মনে এই আশংকার উদয় হচ্ছিল, হয়তো তাঁর এমন কোন ত্রুটি হয়ে গেছে যার ফলে তাঁর রব তাঁর প্রতি নারাজ হয়ে গেছেন এবং তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। এ জন্য তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো প্রকার অসন্তুষ্টির কারণে অহীর সিলসিলা বন্ধ করা হয়নি। বরং এর পেছনে সেই একই কারণ সক্রিয় ছিল যা আলোকোজ্জ্বল দিনের পরে রাতের নিস্তব্ধতা এ প্রশান্তি ছেয়ে যাবার মধ্যে সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ অহীর প্রখর কিরণ। যদি একনাগাড়ে তাঁর প্রতি বর্ষিত হতো তাহলে তাঁর স্নায়ু তা বরদাশত করতে পারতো না। তাই মাঝখানে বিরতি দেয়া হয়েছে। তাঁকে আরাম ও প্রশান্তি দান করাই এর উদ্দেশ্য। নবুয়াতের প্রাথমিক যুগে নবী সা. এই অবস্থার মুখোমুখি হন। সে সময় অহী নাযিলের কষ্ট বরদাশত করার অভ্যাস তাঁর গড়ে ওঠেনি। তাই মাঝে মাঝে ফাঁক দেবার প্রয়োজন ছিল। সূরা মুদদাসসিরের ভূমিকায় আমি একথা সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছি। আর অহী নাযিলের সময় নবী সা. এর স্নায়ুর ওপর এর কী গভীর প্রভাব পড়তো তা আমি সূরা মুয্‌যাম্মিলের ৫ টীকায় বলেছি। পরে তাঁর মধ্যে এই মহাভার বরদাশত করার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে গেলে আর দীর্ঘ ফাঁক দেবার প্রয়োজন থাকেনি।

বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্যঃ

এর বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য রাসূলুল্লাহ সা.কে সান্ত্বনা দেয়া আর এই সান্ত্বনা দানের উদ্দেশ্য ছিল অহী নাযিলের সিলসিলা বন্ধ হয়ে যাবার কারণে তাঁর মধ্যে যে পেরেশানী দেখা দিয়েছিল তা দূর করা। প্রথমে আলো ঝলমল দিনের এবং রাতের নীরবতা ও প্রশান্তির কসম খেয়ে তাঁকে এই মর্মে নিশ্চিন্ততা দান করা হয়েছে যে, তার রব তাঁকে মোটেই পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হননি। এরপর তাঁকে সুসংবাদ দান করা হয়েছে যে, ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁকে যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এগুলো মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার। তাঁর জন্য পরবর্তী প্রত্যেকটি পর্যায় পূর্ববর্তী পর্যায় থেকে উন্নততর হয়ে যেতেই থাকবে এবং কিছুদিনের মধ্যেই মহান আল্লাহ তাঁর ওপর এমনভাবে তাঁর দান বর্ষণ করতে থাকবেন যার ফলে তিনি খুশী হয়ে যাবেন। কুরআনের যেসব সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীকালে অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয় এটি তার অন্যতম। অথচ যে সময় এ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় তখন যেসব অসহায় সাহায্য-সম্বলহীন ব্যক্তি মক্কায় সমগ্র জাতির জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ছিল তারা যে কোনদিন এত বড় বিস্ময়কর সাফল্যের মুখ দেখবে এর কোন দূরবর্তী আলামতও কোথাও দেখা যায়নি।

তারপর মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধু মুহাম্মাদ সা.কে বলেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করেছি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছি- এ ধরনের পেরেশানীতে তুমি ভুগছো কেন? আমি তো তোমার জন্মের দিন থেকেই তোমার প্রতি অবিরাম মেহেরবানী করে আসছি। তুমি এতিম অবস্থায় জন্মলাভ করেছিলে। আমি তোমার প্রতিপালন ও রক্ষাণাবেক্ষণের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা করেছি। তুমি অনভিজ্ঞ ছিলে। আমি তোমাকে পথের সন্ধান দিয়েছি। তুমি অর্থ-সম্পদহীন ছিলে। আমি তোমাকে বিত্তশালী করেছি। এসব কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচেছ যে, তুমি শুরু থেকেই আমার প্রিয়পাত্র আছো এবং আমার মেহেরবানী, অনুগ্রহ দান স্থায়ীভাবে তোমার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সূরা ত্বা-হা’র ৩৭ থেকে ৪২ পর্যন্ত আয়াত গুলোও সামনে রাখতে হবে। এই আয়াত গুলোতে হযরত মূসাকে ফেরাউনের মতো শক্তিশালী জালেমের বিরুদ্ধে পাঠাবার সময় আল্লাহ তাঁর পেরেশানী দূর করার জন্য তাঁর জন্মের পর থেকে কিভাবে আল্লাহর মেহেরবানী তাঁকে ঘিরে রেখেছিল সে কথা তাঁকে বলেন। এই সংগে তাঁকে একথাও বলেন যে এ অবস্থায় তুমি নিশ্চিত থাকো, এই ভয়াবহ অভিযানে তুমি একাকী থাকবে না বরং আমার মেহেরবানীও তোমার সাথে থাকবে।

সবশেষে মহান আল্লাহ নবী সা. এর প্রতি যেসব অনুগ্রহ করেছেন তার জবাবে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে তাঁর কি ধরনের আচরণ করা উচিত এবং তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া কিভাবে আদায় করতে হবে একথা তাঁকে জানিয়ে দেন।

তরজমা ও তাফসীর

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿وَٱلضُّحَىٰ﴾

উজ্জ্বল দিনের কসম

১. এখানে ‘দুহা’ শব্দটি রাতের মোকাবেলায় ব্যবহার করা হয়েছে তাই এর অর্থ উজ্জ্বল দিবা সূরা আল আ’রাফের নিম্নোক্ত আয়াতটিকে এর নজীর হিসেবে পেশ করা যায়ঃ

اَفَاَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰٓى اَنۡ يَّاۡتِيَهُمۡ بَاۡسُنَا بَيَاتًا وَّهُمۡ نَآٮِٕمُوۡنَؕ‏ اَوَاَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰٓى اَنۡ يَّاۡتِيَهُمۡ بَاۡسُنَا ضُحًى وَهُمۡ يَلۡعَبُوۡنَ‏

জনপদবাসীরা কি এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে পড়েছে যে, তাদের ওপর রাতে আমার আযাব আসবে যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে? আর জনপদের লোকেরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে তাদের ওপর দিন দুপুরে আমার আযাব আসবে যখন তারা খেলতে থাকবে?” (আয়াতঃ ৯৭-৯৮)

এই আয়াত গুলোতে ও ‘দুহা’ (ضُحى) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে রাতের মোকাবেলায় আর এর অর্থ চাশত এর সময় নয়, বরং দিন

﴿وَٱلَّيْلِ إِذَا سَجَىٰ﴾

এবং রাতের কসম যখন তা নিঝুম হয়ে যায়

২. মূলে রাতের সাথেسَجَى  শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার মধ্যে শুধুমাত্র অন্ধকার ছেয়ে যাবারই নয় বরং নিঝুম ও শান্ত হয়ে যাবার অর্থও পাওয়া যায় সামনের দিকে যে বর্ণনা আসছে তার সাথে রাতের এই গুণাবলীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে

﴿مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰ﴾

(হে নবী!) তোমার রব তোমাকে কখনো পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি

৩. হাদীস থেকে জানা যায়, কিছুদিন রাসূলুল্লাহ সা. এর ওপর অহী নাযিল বন্ধ ছিল এ সময়টা কতদিনের ছিল, এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে ইবনে জুরাইজ ১২ দিন, কালবী ১৫ দিন, ইবনে আব্বাস ২৫ দিন, সুদ্দী ও মুকাতিল এর মেয়াদ ৪৫দিন বলে বর্ণনা করেছেন মোটকথা, সময়টা এত দীর্ঘ ছিল যে রাসুলুল্লাহ সা. নিজে এ জন্য ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিলেন এবং বিরোধীরাও তাঁকে বিদ্রূপ করতে শুরু করেছিল কারণ তাঁর ওপর নতুন নতুন সূরা নাযিল হলে তিনি তা লোকদের শুনাতেন তাই দীর্ঘদিন যখন তিনি লোকদেরকে কোন অহী শুনালেন না তখন বিরোধীরা মনে করলো এ কালাম যেখান থেকে আসতো সে উৎস বন্ধ হয়ে গেছে জন্দুব ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী রা. রেওয়ায়াত করেন, যখন জিব্রাঈল আ. এর আসার সিলসিলা থেমে গেলো, মুশরিকরা বলতে শুরু করলোঃ মুহাম্মাদকে সা. তাঁর রব পরিত্যাগ করেছেন (ইবনে জারীর, তাবারানী, আবদ ইবনে হুমাইদ, সাঈদ ইবনে মনসূর ও ইবনে মারদুইয়া) অন্যান্য বিভিন্ন রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, রাসূল সা. এর চাচী আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীলের ঘর ছিল তাঁর ঘরের সাথে লাগোয়া সে তাঁকে ডেকে বললোঃ “মনে হচ্ছে তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে” আউফী ও ইবনে জারীর হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করে বলেনঃ কয়েকদিন পর্যন্ত জিব্রীলের আসা বন্ধ থাকার কারণে রাসূলুল্লাহ সা. পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন অন্যদিকে মুশরিকরা বলতে শুরু করলো, তার রব তার প্রতি নারাজ হয়ে গেছেন এবং তিনি তাকে পরিত্যাগ করেছেন কাতাদাহ ও যাহহাক বর্ণিত মুরসাল* হাদীসেও প্রায় এই একই ধরনের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে এ অবস্থায় বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. গভীর দুঃখ ও মর্মব্যাথার কথাও বর্ণিত হয়েছে আর এমনটি হওয়াই তো স্বাভাবিক ছিল কারণ প্রেমাম্পদের দিক থেকে বাহ্যত অমনোযোগিতা ও উপেক্ষা, কুফর ও ঈমানের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যাবার পর এই প্রাণন্তকর সংঘাত সংগ্রামের মাঝ দরিয়ায় যে শক্তিটি ছিল তাঁর একমাত্র সহায় তার সাহায্য থেকে বাহ্যত বঞ্চিত হওয়া এবং এর ওপর বাড়তি বিপদ হিসেবে শত্রুদের বিদ্রূপ-ভর্ৎসনা ইত্যাদি এসব কিছু মিলে অবশ্যি তাঁর জন্য মারাত্মক ধরনের পেরেশানী সৃষ্টি করে দিয়েছিল এ অবস্থায় তাঁর মনে বারবার এ সন্দেহ জেগে থাকবে যে, তিনি এমন কোন ভুল তো করেননি যার ফলে তাঁর রব তাঁর প্রতি নারাজ হয়ে গেছেন এবং তিনি হক ও বাতিলের এই লড়াইয়ে তাঁকে একাকী ছেড়ে দিয়েছেন

এই অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা.কে সান্ত্বনা দেবার জন্য সূরাটি নাযিল হয় এতে দিনের আলোর ও রাতের নিরবতার কসম খেয়ে রাসূলুল্লাহকে সা. বলা হয়েছেঃ তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি নারাজও হননি একথার জন্য যে সম্বন্ধের ভিত্তিতে এই দু’টি জিনিসের কসম খাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে দিনের আলোক মালায় উদ্ভাসিত হওয়া এবং রাতের নিঝুমতা ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন হওয়াযেমন আল্লাহর দিনে মানুষের প্রতি সন্তুষ্ট এবং রাতে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকার জন্য নয় বরং একটি বিরাট বিজ্ঞানময় ব্যবস্থা ও উদ্দেশ্যের আওতাধীনে এই দু’টি অবস্থার উদ্ভব ঠিক তেমনি তোমার কাছে কখনো অহী পাঠানো এবং তা পাঠানো বন্ধ করাও একটি বিরাট বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাও উদ্দেশ্যের আওতাধীনেই হয়ে থাকে মহান আল্লাহ‌ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে অহী পাঠান এবং যখন অহী পাঠান না তখন মনে করতে হবে, তিনি তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তোমাকে ত্যাগ করেছেন–এ ধরনের কোন কথা বা বক্তব্যের কোন সম্পর্ক এখানে নেই এছাড়া এই বিষয়বস্তুর সাথে এই কসমের আরো সম্পর্ক রয়েছে তা হচ্ছে এই যে, দিনে সূর্যের কিরণ যদি অনবরত মানুষের ওপর পড়তে থাকে তাহলে তা তাকে ক্লান্ত ও অবশ করে দেবে তাই একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত দিনের আলো বিরাজ করে এরপরে রাতের আসা অপরিহার্য হয়ে পড়ে এভাবে মানুষ ক্লান্তি দূর করতে ও প্রশান্তি লাভ করতে পারে অনুরূপভাবে অহীর কিরণ যদি অনবরত তোমার ওপর পড়তে থাকে তাহলে তা তোমার স্নায়ুর সহ্যের অতীত হয়ে পড়বে তাই মাঝে মধ্যে ফাতরাতুল অহীর (অহী নাযিলের সিলসিলা বন্ধ হয়ে যাওয়া) একটি সময়ও আল্লাহ‌ ঠিক করে রেখেছেন এভাবে অহী নাযিল হওয়ার কারণে তোমার ওপর যে চাপ পড়ে তার প্রভাব খতম যাবে এবং তুমি মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারবে অর্থাৎ অহীসূর্যের উদয় যেন উজ্জ্বল দিনের সমতুল্য এবং ফাতরাতুল অহীর সময়টি রাতের প্রশান্তির পর্যায়ভুক্ত

* মুরসাল এমন এক ধরনের হাদীসকে বলা হয় যেখানে হাদীসের মূল বর্ণনাকারী হিসেবে সাহাবীর নাম উল্লেখিত হয়নি অর্থাৎ তাবেয়ী সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়াই রাসূলুল্লাহ সা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইমামদের মধ্যে আবু হানিফারাহি. ও মালিক রাহি.-ই একমাত্র এ ধরনের হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, এক বর্ণনামতে ইমাম ইবনে হাম্বল রা. মুরসাল হাদীসের ভিত্তিতে ফতওয়া দিয়েছেন এবং এর বিপরীত রায়কে রদ করেছেন (আ’লামূল মুকিইন, ইবনে কাইয়েম) -অনুবাদক

﴿وَلَلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ لَّكَ مِنَ ٱلْأُولَىٰ﴾

নিঃসন্দেহে তোমার জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো

৪. মহান আল্লাহ‌ নবী সা.কে এ সুখবরটি এমন এক সময় দেন যখন মাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক ছিল তাঁর সহযোগী এবং অন্যদিকে সমগ্র জাতি ছিল তাঁর বিরোধী বাহ্যত সাফল্যের কোন দূরবর্তী চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না ইসলামের প্রদীপ মক্কাতে টিম টিম করে জ্বলছিল চতুর্দিক ে ঝড় উঠেছিল তাকে নিভিয়ে দেবার জন্য সে সময় আল্লাহ‌ তাঁর নবীকে বলেনঃ প্রাথমিক যুগের সংকটে তুমি মোটেই পেরেশান হয়ো না তোমার জন্য পরবর্তী প্রত্যেকটি যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো প্রমাণিত হবে তোমার শক্তি, সম্মান, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা দিনের পর দিন বাড়তে থাকবে তোমার প্রভাব ও অনুপ্রবেশের সীমানা বিস্তৃত হতেই থাকবে আবার এই ওয়াদা কেবল দুনিয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয় এর মধ্যে এ ওয়াদাও আছে যে, আখেরাতে তুমি যে মর্যাদা লাভ করবে তা দুনিয়ায় তোমার অর্জিত মর্যাদা থেকে অনেক গুণ বেশী হবে তাবারানী তাঁর আওসাত গ্রন্থে এবং বাইহাকী তাঁর দালায়েল গ্রন্থে ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন তাতে রাসূলুল্লাহ সা. বলেনঃ “আমার পরে আমার উম্মাত যেসব দেশ জয় করবে তা আমার সামনে পেশ করা হয় তাতে আমি খুব খুশী হই তখন মহান আল্লাহ‌ একথা নাযিল করেন যে, আখেরাত তোমার জন্য দুনিয়া থেকেও ভালো

﴿وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰٓ﴾

আর শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যে, তুমি খুশী হয়ে যাবে

৫. অর্থাৎ দিতে কিছুটা দেরী হলে সে সময় দূরে নয়, যখন তোমার ওপর তোমার রবের দান ও মেহেরবানী এমনভাবে বর্ষিত হবে যাতে তুমি খুশী হয়ে যাবে এই ওয়াদাটি নবী সা. এর জীবনেই পূর্ণ হয়েছে সমগ্র আরব ভূখণ্ড, দক্ষিণের সমুদ্র উপকূল থেকে উত্তরে রোম সাম্রাজ্যের সিরীয় ও পারস্য সাম্রাজ্যের ইরাকী সীমান্ত এবং পূর্বে পারস্য উপসাগর থেকে নিয়ে পশ্চিম লোহিত পর্যন্ত এলাকা তাঁর শাসনাধীনে চলে আসে আরবের ইতিহাসে এই প্রথমবার এই সমগ্র ভূখণ্ডটি একটি আইন ও শাসন ব্যবস্থার আওতাধীন হয় যে শক্তিই এর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর কালেমায় সমগ্র দেশ গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে যে দেশে মুশরিক ও আহলি কিতাবরা নিজেদের মিথ্যা মতবাদ ও আদর্শকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল সেখানে মানুষ কেবল আনুগত্যের শিরই নত করেনি বরং তাদের মনও বিজিত হয়ে যায় এবং তাদের বিশ্বাসে, নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে বিরাট বিপ্লব সাধিত হয় জাহেলিয়াতের গভীর পংকে নিমজ্জিত একটি জাতি মাত্র তেইশ বছরের মধ্যে এমনভাবে বদলে যায় যে, সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে এর কোন নজীর নেই এরপর নবী সা. যে আন্দোলনের বীজ বপন করে গিয়েছিলেন তা বিপুল শক্তিমত্তা সহকারে জেগে ওঠে এবং এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা তিন মহাদেশের বিরাট অংশে ছেয়ে যায় এবং দুনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার প্রভাব চড়িয়ে পড়ে এসব মহান আল্লাহ‌ তাঁর রাসূলকে দিয়েছেন দুনিয়ায় আর আখেরাতে তাঁকে যা কিছু যা দেবেন তার বিপুলতা ও মহত্বের কল্পনাই করা যাবে না (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হাঃ ১১২ টীকা)

﴿أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًۭا فَـَٔاوَىٰ﴾

তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পাননি? তারপর তোমাকে আশ্রয় দেননি?

৬. অর্থাৎ তোমাকে ত্যাগ করার ও তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না যখন তুমি এতিম অবস্থায় জন্মলাভ করেছিলে তখন থেকেই তো আমি তোমার প্রতি মেহেরবানী করে আসছি মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ছয় মাসের সময় নবী সা. এর পিতা ইন্তিকাল করেন কাজেই এতিম হিসেবেই তিনি পৃথিবীতে আসেন কিন্তু এ অবস্থায় মহান আল্লাহ‌ একদিনও তাঁকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেননি ছ’বছর বয়স পর্যন্ত মা তাঁকে লালন-পালন করতে থাকেন তাঁর স্নেহছায়া থেকে বঞ্চিত হবার পর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর দাদা তাঁকে প্রতিপালন করেন দাদা কেবল তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন তাই না বরং তাঁর জন্য গর্বও করতেন তিনি লোকদের বলতেন, আমার এই ছেলে একদিন দুনিয়ায় বিপুল খ্যাতির অধিকারী হবে তার ইন্তিকালের পর চাচা আবু তালিব তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন চাচা তাঁর সাথে এমন প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার করেন যে, কোন পিতার পক্ষেও এর চেয়ে বেশী প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব নয় এমনকি নবুওয়াত লাভের পর সমগ্র জাতি যখন তাঁর শত্রু হয়ে গিয়েছিল তখন দশ বছর পর্যন্ত তিনিই তার সাহায্যার্থে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন

﴿وَوَجَدَكَ ضَآلًّۭا فَهَدَىٰ﴾

তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান, তারপর তিনিই পথ দেখান

৭. মূলে ‘দাল্লান’ (ضالا) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এটি এসেছে ‘দালালাত’ (ضلا لت) থেকে এর কয়েকটি অর্থ হয় এর একটি অর্থ গোমরাহী দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এক ব্যক্তি পথ জানে না, এক জায়গায় গিয়ে সে সামনে বিভিন্ন পথ দেখে কোন পথে যাবে তা ঠিক করতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এর আর একটি অর্থ হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া বা হারানো জিনিস আরবী প্রবাদে বলা হয়, (ضَلَّ الْمَاءُفِى اللَّبَنِ) অর্থাৎ পানি দুধের মধ্যে হারিয়ে গেছে মরুভূমির মধ্যে যে গাছটি একাকি দাঁড়িয়ে থাকে এবং তার আশেপাশে কোন গাছ থাকে না তাকেও আরবীতে ‘দাল্লাহ’ বলা হয় নষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থেও ‘দালাল’ (ضلال) বলা হয় আবার গাফলতির জন্যও ‘দালাল’ ব্যবহার করা হয় যেমন কুরআন মজীদে এর দৃষ্টান্ত দেখা যায় (لَايَضِلُّ رَبِّىْ وَ لاَ يَنْسَى) অর্থাৎ আমার রব না গাফেল হন আর না তিনি ভুলে যান (ত্বা-হাঃ ৫২) এই বিভিন্ন অর্থের মধ্য থেকে প্রথম অর্থটি এখানে খাপ খায় না কারণ ইতিহাসে রাসূলের শৈশব থেকে নিয়ে নবুওয়াত লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত সময় কালের যেসব অবস্থা লিপিবদ্ধ রয়েছে তাতে কোথাও তিনি কখনো মূর্তিপূজা, শিরক বা নাস্তিক্যবাদে লিপ্ত হয়েছিলেন অথবা তাঁর জাতির মধ্যে যেসব জাহেলী কার্যকলাপ, রীতিনীতি ও আচার আচরণের প্রচলন ছিল তার সাথেও তিনি কোনক্রমে জড়িত হয়েছিলেন বলে সামান্যতম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না তাই (وَوَجَدَكَ ضَالاْ) বাক্যে কোনক্রমেই এ অর্থ হতে পারে না যে, আল্লাহ‌ তাঁকে বিশ্বাস ও কর্মের দিক থেকে গোমরাহ হিসেবে পেয়েছিলেন তবে অন্যান্য অর্থগুলো কোন না কোনভাবে এখানে খাপ খেতে পারে বরং বিভিন্ন দিক থেকে হয়তো প্রত্যেকটি অর্থই এখানে কার্যকর হতে পারে নবুওয়াত লাভের পূর্বে নবী সা. আল্লাহর অস্তিত্বে ও তাঁর একত্বে বিশ্বাসী ছিলেন, এতে সন্দেহ নেই সে সময়তাঁর জীবন গোনাহ মুক্ত এবং নৈতিক গুণাবলী সমন্বিত ছিল কিন্তু সত্যদ্বীন এবং তার মূলনীতি ও বিধান সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না যেমন কুরআনে বলা হয়েছেঃ مَا كُنۡتَ تَدۡرِىۡ مَا الۡكِتٰبُ وَلَا الۡاِيۡمَانُ  অর্থাৎ “তুমি জানতে না কিতাব কি এবং ঈমানই বা কি” (আশ শুরা ৫২) এ আয়াতের এ অর্থও হতে পারে যে, নবী সা. একটি জাহেলী সমাজের বুকে হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং নবুওয়াত লাভের আগে একজন পথপ্রদর্শক ও পথের দিশা দানকারী হিসেবে তাঁর ব্যক্তিত্ব সুস্পষ্ট হয়ে সামনে আসেনি এর এ অর্থও হতে পারে যে, জাহেলিয়াতের মরুভূমিতে আপনি দাঁড়িয়েছিলেন একটি নিসঙ্গ বৃক্ষের মতো এই বৃক্ষের ফল উৎপাদনের ও চারাগাছবৃদ্ধি করে আর একটি বাগান তৈরি করার যোগ্যতা ছিল কিন্তু নবুওয়াতের পূর্বে এ যোগ্যতা কোনো কাজে লাগেনি এ অর্থে হতে পারে যে, মহান আল্লাহ‌ আপনাকে অসাধারণ ক্ষমতা দান করেছিলেন জাহেলিয়াতের অনুপযোগী ও বিরোধী পরিবেশেতা নষ্ট হতে বসেছিল ‘দালাল’ কে গাফলতির অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে অর্থাৎ নবুওয়াত লাভের পরে আল্লাহ‌ তাঁকে যেসব জ্ঞান ও সত্যের সাথে পরিচিত করিয়েছেন ইতিপূর্বে তিনি সেগুলো থেকে গাফেল ছিলেন কুরআনেও এক জায়গায় বলা হয়েছে وَاِنۡ كُنۡتَ مِنۡ قَبۡلِه لَمِنَ الۡغٰفِلِيۡنَ  আর যদিও তুমি ইতিপূর্বে এসব বিষয়ে গাফেল ছিলে” (ইউসুফঃ ৩) এছাড়াও দেখুন সূরা আল বাকারাহঃ ২৮৩ আয়াত এবং আশ শুআ’রাঃ ২০)

﴿وَوَجَدَكَ عَآئِلًۭا فَأَغْنَىٰ﴾

তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পান, তারপর তোমাকে ধনী করেন

৮. নবী সা. পৈতৃক সূত্রে উত্তরাধিকার হিসেবে শুধুমাত্র একটি উটনী ও একটি বাঁদী লাভ করেছিলেন এভাবে দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবনের সূচনা হয় তারপর এমন এক সময় আসে যখন মক্কার সবচেয়ে ধনী মহিলা হযরত খাদীজা রা. প্রথমে ব্যবসায়ে তাঁকে নিজের সাথে শরীক করে নেন তারপর তিনি তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হন এভাবে তাঁর সমস্ত ব্যবসায়ের দায়িত্বও তিনি নিজের হাতে তুলে নেন এই সুবাদে তিনি কেবল ধনীই হননি এবং তাঁর ধনাঢ্যতা নিছক স্ত্রীর ধনের ওপর নির্ভরশীল ছিল না বরং তাঁর ব্যবসায়ের উন্নতি বিধানে তাঁর নিজের যোগ্যতা ও শ্রম বিরাট ভূমিকা পালন করে

﴿فَأَمَّا ٱلْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ﴾

কাজেই এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না

৯. অর্থাৎ যেহেতু তুমি নিজে এতিম ছিলে, আল্লাহ‌ তোমার প্রতি মেহেরবানী করেছেন এবং এতিম অবস্থায় সর্বোত্তম পদ্ধতিতে তোমাকে সাহায্য-সহায়তা দান করেছেন, তাই আল্লাহর এই সাহায্যের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তুমি কখনো কোন এতিমের প্রতি জুলুম করবে না

﴿وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ﴾

১০ প্রার্থীকে তিরস্কার করো না১০

১০. এর দু’টি অর্থ হয় যদি প্রার্থীকে সাহায্য প্রার্থনাকরী অভাবী হিসেবে ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হয়, তাকে সাহায্য করতে পারলে করো আর না করতে পারলে কোমল স্বরে তাকে নিজের অক্ষমতা বুঝিয়ে দাও কিন্তু কোনক্রমে তার সাথে রূঢ় ব্যবহার করো না এই অর্থের দিক দিয়ে নির্দেশটিকে আল্লাহর সেই অনুগ্রহের জবাবে দেয়া হয়েছে বলা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে “তুমি অভাবী ছিলে তারপর আল্লাহ‌ তোমাকে ধনী করে দিয়েছেন” আর যদি প্রার্থীকে জিজ্ঞেসকারী অর্থাৎ দ্বীনের কোন বিষয় বা বিধান জিজ্ঞেসকারী অর্থে ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হয়, এই ধরনের লোক যতই মূর্খ ও অজ্ঞ হোক না কেন এবং যতই অযৌক্তিক পদ্ধতিতে সে প্রশ্ন করুক বা নিজের মানসিক সংকট উপস্থাপন করুক না কেন, সকল অবস্থায়ই স্নেহশীলতা ও কোমলতা সহকারে তাকে জবাব দাও এবং জ্ঞানের অহংকারে বদমেজাজ লোকদের মতো ধমক দিয়ে বা কড়া কথা বলে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ো না এই অর্থের দিক দিয়ে এই বাণীটিকে আল্লাহর সেই অনুগ্রহের জবাবে দেয়া হয়েছে বলা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে—“তুমি পথের খোঁজ জানতে না তারপর তিনিই তোমাকে পথনির্দেশনা দিয়েছে” হযরত আবু দারদারা., হাসান বসরী রাহি., সুফিয়ান সওরী রাহি. এবং অন্যান্য কয়েকজন মনীষী এই দ্বিতীয় অর্থটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন কারণ তাদের মতে বক্তব্য বিন্যাসের দিক দিয়ে বিচার করলে এ বক্তব্যটি ( وَوَجَدَكَ ضَآلاًّ فَهَدٰى) এর জবাবেই দেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়

﴿وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ﴾

১১ আর নিজের রবের নিয়ামত প্রকাশ করো১১

১১. নিয়ামত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক এর অর্থ এমন সব নিয়ামত হয়, যা এই সূরাটি নাযিল হওয়ার সময় পর্যন্ত আল্লাহ‌ তাঁর রাসূলকে দান করেছিলেন আবার এমন সব নিয়মিতও হয়, যা এই সূরায় প্রদত্ত নিজের ওয়াদা এবং পরবর্তীকালে তা পূর্ণতা দান প্রসঙ্গে তিনি রাসূলকে প্রদান করেছিলেন এর ওপর আবার হুকুম দেয়া হয়েছে, হে নবী! আল্লাহ‌ তোমাকে যেসব নিয়মিত দান করেছেন তার প্রত্যেকটির কথা স্মরণ কর এ নিয়ামত বিশেষ আকারে নিজেকে প্রকাশ করতে চায় সামগ্রিকভাবে সমস্ত নিয়ামত প্রকাশের পদ্ধতি নিম্নরূপঃ মুখে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবেএবং একথার স্বীকৃতি দিতে হবে যে, আমি যেসব নিয়ামত লাভ করেছি সবই আল্লাহর মেহেরবানীও অনুগ্রহের ফল নয়তো এর মধ্যে কোনো একটিও আমার নিজের ব্যক্তিগত উপার্জনের ফসল নয় দাওয়াতও তাবলীগের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে নবুওয়াতের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে লোকদের মধ্যে বেশী বেশী করে কুরআন প্রচার করে এবং তার শিক্ষাবলীর সাহায্যে মানুষের হৃদয়দেশ আলোকিত করে কুরআনের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে পথহারা মানুষদের সরল সত্য পথ দেখিয়ে দিয়ে এবং সবরের সাহায্যে এই কাজের যাবতীয় তিক্ততা ও কষ্টের মোকাবেলা করে হেদায়েত লাভের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে এতিম অবস্থায় সাহায্য-সহায়তা দান করে আল্লাহ‌ যে অনুগ্রহ দেখিয়েছেন এতিমদের সাথে ঠিক তেমনি অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহারকরে এই নিয়ামতটি প্রকাশ করা যেতে পারে দারিদ্র্য ও অভাব থেকে সচ্ছলতাও ধনাঢ্যতা দান করার জন্য যে অনুগ্রহ আল্লাহ‌ করেছেন অভাবী মানুষদের সাহায্য করেই সেই নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে মোটকথা, আল্লাহ‌ তাঁর অনুগ্রহ ও নিয়ামতসমূহ বর্ণনা করার পর একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে তাঁর রাসূলকে এই গভীর ও ব্যাপক অর্থপূর্ণ হেদায়াত দান করেন

 

— সমাপ্ত —

শেয়ারঃ

সম্পাদকের ব্লগ

অনলাইন পাঠাগার

অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ

সকল সূরা

০০১

আল ফাতিহা

মাক্কী

৭ আয়াত

০০২

আল বাকারাহ

মাদানী

২৮৬ আয়াত

০০৩

আলে ইমরান

মাদানী

২০০ আয়াত

০০৪

আন নিসা

মাদানী

১৭৬ আয়াত

০০৫

আল মায়িদাহ

মাদানী

১২০ আয়াত

০০৬

আল আনআ’ম

মাক্কী

১৬৫ আয়াত

০০৭

আল আ’রাফ

মাক্কী

২০৬ আয়াত

০০৮

আল আনফাল

মাদানী

৭৫ আয়াত

০০৯

আত তাওবা

মাদানী

১২৯ আয়াত

০১০

ইউনুস

মাক্কী

১০৯ আয়াত

০১১

হূদ

মাক্কী

১২৩ আয়াত

০১২

ইউসুফ

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৩

আর রা’দ

মাক্কী

৪৩ আয়াত

০১৪

ইব্রাহীম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০১৫

আল হিজর

মাক্কী

৯৯ আয়াত

০১৬

আন নাহল

মাক্কী

১২৮ আয়াত

০১৭

বনী ইসরাঈল

মাক্কী

১১১ আয়াত

০১৮

আল কাহফ

মাক্কী

১১০ আয়াত

মারইয়াম

০২০

ত্বা-হা

মাক্কী

১৩৫ আয়াত

০২১

আল আম্বিয়া

মাক্কী

১১২ আয়াত

০২২

আল হাজ্জ

মাদানী

৭৮ আয়াত

০২৩

আল মু’মিনূন

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৪

আন নূর

মাক্কী

১১৮ আয়াত

০২৫

আল ফুরকান

মাক্কী

৭৭ আয়াত

০২৬

আশ শুআ’রা

মাক্কী

২২৭ আয়াত

০২৭

আন নামল

মাক্কী

৯৩ আয়াত

০২৮

আল কাসাস

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০২৯

আল আনকাবূত

মাক্কী

৬৯ আয়াত

০৩০

আর রূম

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৩১

লুকমান

মাক্কী

৩৪ আয়াত

০৩২

আস সাজদাহ

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৩৩

আল আহযাব

মাদানী

৭৩ আয়াত

০৩৪

আস সাবা

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৫

ফাতির

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৩৬

ইয়াসিন

মাক্কী

৮৩ আয়াত

০৩৭

আস সাফফাত

মাক্কী

১৮২ আয়াত

০৩৮

ছোয়াদ

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৩৯

আয যুমার

মাক্কী

৮৮ আয়াত

০৪০

আল মু’মিন

মাক্কী

৮৫ আয়াত

০৪১

হা-মীম আস সাজদাহ

মাক্কী

৫৪ আয়াত

০৪২

আশ শূরা

মাক্কী

৫৩ আয়াত

০৪৩

আয যুখরুফ

মাক্কী

৮৯ আয়াত

০৪৪

আদ দুখান

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৫

আল জাসিয়াহ

মাক্কী

৩৭ আয়াত

০৪৬

আল আহক্বাফ

মাক্কী

৫৯ আয়াত

০৪৭

মুহাম্মাদ

মাদানী

৩৮ আয়াত

০৪৮

আল ফাতহ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৪৯

আল হুজুরাত

মাদানী

১৮ আয়াত

০৫০

ক্বাফ

মাদানী

৪৫ আয়াত

০৫১

আয যারিয়াত

মাক্কী

৬০ আয়াত

০৫২

আত তূর

মাক্কী

৪৯ আয়াত

০৫৩

আন নাজম

মাক্কী

৬২ আয়াত

০৫৪

আল ক্বামার

মাক্কী

৫৫ আয়াত

০৫৫

আর রাহমান

মাদানী

৭৮ আয়াত

০৫৬

আল ওয়াকিআ’

মাক্কী

৯৬ আয়াত

০৫৭

আল হাদীদ

মাদানী

২৯ আয়াত

০৫৮

আল মুজাদালাহ

মাদানী

২২ আয়াত

০৫৯

আল হাশর

মাদানী

২২ আয়াত

০৬০

আল মুমতাহিনাহ

মাদানী

১৩৫ আয়াত

০৬১

আস সাফ

মাদানী

১৪ আয়াত

০৬২

আল জুমুআ’

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৩

আল মুনাফিকুন

মাদানী

১১ আয়াত

০৬৪

আত তাগাবুন

মাদানী

১৮ আয়াত

০৬৫

আত তালাক্ব

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৬

আত তাহরীম

মাদানী

১২ আয়াত

০৬৭

আল মুলক

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৬৮

আল কালাম

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৬৯

আল হাককাহ

মাক্কী

৫২ আয়াত

০৭০

আল মাআ’রিজ

মাক্কী

৪৪ আয়াত

০৭১

নূহ

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭২

আল জিন

মাক্কী

২৮ আয়াত

০৭৩

আল মুযযাম্মিল

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৪

আল মুদ্দাসসির

মাক্কী

২০ আয়াত

০৭৫

আল কিয়ামাহ

মাক্কী

৪০ আয়াত

০৭৬

আদ দাহর

মাদানী

৩১ আয়াত

০৭৭

আল মুরসালাত

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৮

আন নাবা

মাক্কী

৫০ আয়াত

০৭৯

আন নাযিআ’ত

মাক্কী

৪৬ আয়াত

০৮০

আবাসা

মাক্কী

৪২ আয়াত

০৮১

আত তাকবীর

মাক্কী

২৯ আয়াত

০৮২

আল ইনফিতার

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৩

আল মুতাফফিফীন

মাক্কী

৩৬ আয়াত

০৮৪

আল ইনশিকাক

মাক্কী

২৫ আয়াত

০৮৫

আল বুরূজ

মাক্কী

২২ আয়াত

০৮৬

আত তারিক

মাক্কী

১৭ আয়াত

০৮৭

আল আ’লা

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৮৮

আল গাশিয়াহ

মাক্কী

২৬ আয়াত

০৮৯

আল ফাজর

মাক্কী

৩০ আয়াত

০৯০

আল বালাদ

মাক্কী

২০ আয়াত

০৯১

আশ শামস

মাক্কী

১৫ আয়াত

০৯২

আল লাইল

মাক্কী

২১ আয়াত

০৯৩

আদ দুহা

মাক্কী

১১ আয়াত

০৯৪

আলাম নাশরাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৫

আত তীন

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৬

আল আলাক

মাক্কী

১৯ আয়াত

০৯৭

আল কাদর

মাক্কী

৫ আয়াত

০৯৮

আল বাইয়্যিনাহ

মাক্কী

৮ আয়াত

০৯৯

আল যিলযাল

মাদানী

৮ আয়াত

১০০

আল আ’দিয়াত

মাক্কী

১১ আয়াত

১০১

আল কারিআ’হ

মাক্কী

১১ আয়াত

১০২

আত তাকাসুর

মাক্কী

৮ আয়াত

১০৩

আল আসর

মাদানী

৮ আয়াত

১০৪

আল হুমাযাহ

মাক্কী

৯ আয়াত

১০৫

আল ফীল

মাক্কী

৫ আয়াত

১০৬

কুরাইশ

মাক্কী

৪ আয়াত

১০৭

আল মাউন

মাক্কী

৭ আয়াত

১০৮

আল কাউসার

মাক্কী

৩ আয়াত

১০৯

আল কাফিরূন

মাক্কী

৬ আয়াত

১১০

আন নাসর

মাদানী

৩ আয়াত

১১১

আল লাহাব

মাক্কী

৫ আয়াত

১১২

আল ইখলাস

মাক্কী

৪ আয়াত

১১৩

আল ফালাক

মাক্কী

৫ আয়াত

১১৪

আন নাস

মাক্কী

৬ আয়াত